মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভোগান্তি বাংলাদেশি রোগীদের

অবশেষে ভারতে চিকিৎসক ধর্মঘট প্রত্যাহার

কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতজুড়ে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাদেশি রোগী ও তাদের স্বজনরা। একদিকে তারা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না, আরেকদিকে থাকা-খাওয়া নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। তবে গতকাল চিকিৎসকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কথা বলার পর  ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সান্সেস হসপিটালে চিকিৎসার জন্য আসা উত্তরার বাসিন্দা নূর এলাহি শাহদাত জানান, ‘নিউমার্কেট থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে এখানে এসেছি। আমরা মূলত হেলথ চেক-আপ করাতেই বাংলাদেশ থেকে এখানে আসি। কয়েক দিন এখানে থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে একদিন দেরি মানেই অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া, ট্যাক্সি ভাড়া গুনতে হয়। সেই সঙ্গে সময়ও নষ্ট হয়। আমরা যারা এখানে আসি তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ তার অভিমত, ‘বাংলাদেশে যদি ভালো চিকিৎসা হতো তবে এত কষ্ট করে মানুষ এখানে আসত না। আমরা এখানে সুস্থতার জন্য এসেছি, কিন্তু এখানেও সমস্যা শুরু হয়েছে।’ আরএন টেগোরেই হেলথ চেকআপ ও চিকিৎসার জন্য গতকালই কলকাতায় এসেছেন ঢাকার গোলাম মাওলা। তিনি জানান, হোটেল থেকে আমরা যখন এখানে এসে জানতে পারি যে ডাক্তারা ধর্মঘট করেছে, সেক্ষেত্রে জেনারেল চেকআপ না করতে পারার কারণে আমরা সমস্যায় পড়ব এবং অন্য কর্মসূচিতেও তার প্রভাব পড়বে। এ অবস্থায় আমরা চাই যে এর সুষ্ঠু সমাধান হোক। একই দিন ফরিদপুর থেকে কলকাতার শঙ্কর নেত্রালয়ে চোখের চিকিৎসা করাতে এসেছেন সিদ্দিকুর রহমান। তিন মাস আগে তিনি এখানে চোখের অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন, কিন্তু সেবার এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু গতকাল ডাক্তারদের ধর্মঘটের ফলে দিশেহারা অবস্থা সিদ্দিকুরের। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে সীমিত পরিমাণ অর্থ নিয়ে এসেছি। কিন্তু অতিরিক্ত দুই-তিন দিন বেশি সময় লাগলে সমস্যায় পড়ে যাব। এখানে থাকা-খাওয়া সব মিলিয়ে ব্যয়বহুল খরচ। এসে শুনলাম ডাক্তার বাবুদের ধর্মঘট চলছে। এ অবস্থায় তারা দেখবেন কি না বা নতুন করে কবে তারিখ দেবেন তা বুঝতে পারছি না।’

বাংলাদেশ থেকে কলকাতার মুকুন্দপুরের আরএন টেগোর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা এক রোগীর আত্মীয় বলেন, ‘কলকাতা যেহেতু আমাদের খুব কাছাকাছি একটা শহর, সেক্ষেত্রে যোগাযোগের সুবিধার জন্য আমরা এখানেই আসি। আসার পরই আমরা জানতে পারলাম যে চিকিৎসকদের একটি ধর্মঘট চলছে। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমরা এ চিকিৎসার ওপর খুবই নির্ভরশীল, আমরা অনেক আশা নিয়ে আসি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হলেও আমরা বিদেশি। তাই আমাদের কথা ভেবে আউটডোর পরিষেবা চালু রাখা উচিত ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা নির্দিষ্ট সময় নিয়ে এখানে আসি, আমাদের একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকে। সেক্ষেত্রে একদিন যদি বেশি থাকতে হয় সেটা আমাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কষ্ট। তা ছাড়া আমাদের কর্মসূচিতেও রদবদল ঘটে।’  

চিকিৎসকদের প্রতি তার আবেদন, আন্দোলন থাকবে, দাবি আদায়ও থাকবে। কিন্তু আপনাদের মহান পেশাকে সম্মান জানিয়েই এ কর্মবিরতি তুলে নেওয়া উচিত।  এদিকে বিদেশি রোগীদের পাশাপাশি রাজ্যের হাজার হাজার রোগী যেখানে দিশেহারা, সেখানে এ সমস্যা নিরসনে সরকার ও আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে টানাপোড়েন এখনো চলছেই। গতকাল বেলা ৩টায় নবান্নের সভাগৃহে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ছিল আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের। কিন্তু এর আগে এদিন সকালে এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে একটি সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, বৈঠকের ব্যাপারে সরকারিভাবে তাদের কাছে কোনো চিঠি এসে পৌঁছায়নি। তারা আরও জানায়, বন্ধ ঘরে নয়, গণমাধ্যমের সামনেই হতে হবে ওই বৈঠক। আন্দোলনরত ডাক্তারদের এক প্রতিনিধি লিখিত বিবৃতিতে বলেন, এ মুহূর্তে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সাধারণ মানুষই এ অচলাবস্থার সবচেয়ে বড় শিকার। আমাদের প্রশ্ন- আর কতদিন এ অবস্থা চলবে।

সর্বশেষ খবর