স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েকে নিয়ে একা হয়ে পড়েছিলেন রোকসানা আক্তার রুবি (৩২)। রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুরে তার বাবার আধা কাঠা জায়গায় তিন বোন ও এক ভাইয়ের পাশাপাশি তিনিও অংশীদার ছিলেন। চেয়েছিলেন অভাব ঘোচাতে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে পৈতৃক ভিটায় মাথা গুঁজবেন। এ নিয়ে তার ভাই স্বপনের সঙ্গে চলছিল রুবির এক ধরনের দ্বন্দ্ব। এক সময় অন্য আত্মীয়রাও তার খোঁজ-খবর নেওয়া বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েন রুবি। সিদ্ধান্ত নেন মেয়েকে নিয়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেবেন। হাসপাতালে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমনি তথ্য দিয়েছেন রোকসানা আক্তার রুবি।
গতকাল মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহা জানান, ওই নারী এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি সুস্থ হলে তাকে আদালতে হাজির করা হবে। রবিবার রাতে মুগদার মানিকনগরে সাড়ে তিন বছরের মেয়ে রোজা ফারদিনকে আইসক্রিমের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে ওই নারীর বিরুদ্ধে। মেয়েকে হত্যার পর তিনি নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। শিশু রোজা ফারদিনকে হত্যার অভিযোগে সোমবার মুগদা থানায় একটি মামলা করেন শিশুটির চাচা সোহেল। জানা যায়, প্রায় দেড় মাস আগে শিশুটির বাবা মনজুর হাসান রাসেল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। এরপর মেয়ে নিয়ে মুগদার ৯৬ নম্বর মিয়াজান গলি মানিকনগরে থাকতেন রুবি। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাবের সংসার চালাতে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ধরনা দেওয়া শুরু করেন। কেউ তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি। অবশেষে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া কমলাপুরের জমিতে মেয়েকে নিয়ে থাকার জন্য ভাই স্বপনের কাছে দাবি তোলেন। কিন্তু ওই জমি দিতে রাজি হয়নি স্বপন। গত শনিবারও স্বপনের কাছে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে শেষ বারের মতো জমির ভাগ চান রুবি। কিন্তু স্বপনের মন গলেনি। তাই বাধ্য হয়ে মেয়ে রোজাকে আইসক্রিমের সঙ্গে ১০টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন এবং নিজেও খান। এরপর রোজাকে কোলে করে ঘর থেকে বের হয়ে সন্দেহজনক আচরণ করতে থাকেন। এ সময় মা-মেয়ের মুখে ফেনা দেখে আশপাশের বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। দ্রুত তাদের মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোজাকে মৃত ঘোষণা করেন।