শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাইপ্রাসে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের হাতছানি

শিমুল মাহমুদ, বৈরুত (লেবানন) থেকে ফিরে

বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমশক্তি পাঠানো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে সাইপ্রাসে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাস জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের জন্য ছোট বাজার হলেও অবস্থানগত কারণে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। লেবাননের বৈরুত এয়ারপোর্ট থেকে সাইপ্রাসের বিমান পথের দূরত্ব ১৪৫ কিলোমিটার। সময়ের হিসাবে মাত্র ২৬ মিনিটের পথ। অন্যদিকে সাইপ্রাসের সমুদ্রবন্দরটি এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট হাব হিসেবে চিহ্নিত। লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার সাইপ্রাসের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। গত আড়াই বছরে সে দেশের প্রেসিডেন্টসহ মন্ত্রীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন তিনি। বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ধ্যান-ধারণা। সাইপ্রাসের  প্রেসিডেন্ট সহায়তা চেয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের। বলেছেন, আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাই। সাইপ্রাসের কয়েকজন মন্ত্রীও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

ইউরোপের প্রবেশদ্বার : সাইপ্রাস হচ্ছে ইউরোপের প্রবেশদ্বার। এ জন্য সাইপ্রাসে যেতে আগ্রহী অনেকেই। নিয়ম-নীতি মেনে সাইপ্রাস হয়ে বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশে ছড়িয়ে পড়া কঠিন কোনো কাজ নয়। তবে ইতিপূর্বে দালালচক্রের পাল্লায় পড়ে জাল কাগজপত্র নিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাস গিয়ে অনেকেই বিপদে পড়েছেন। ফলে এই প্রক্রিয়াটিই জটিল হয়ে গেছে। রাষ্ট্রদূত জানালেন, প্রথমদিকে দালালদের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসায় যারা সাইপ্রাস গেছেন তাদের অনেকেরই কাগজপত্র জাল ছিল। সে জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাস যাওয়ার সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। সম্প্রতি লেবাননে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মেডেল প্যারেড অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে কথা হয় সাইপ্রাসে বাংলাদেশি মানি এক্সচেঞ্জ এবং খাদ্য ব্যবসায়ী জি এম মুকুলের সঙ্গে। তিনি সাইপ্রাসের বাংলাদেশ কমিউনিটির সভাপতি। জি এম মুকুল জানান, বর্তমানে সাইপ্রাসে ৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। সাইপ্রাসে স্টুডেন্ট ভিসায় আসতে পারলে সুবিধা হয়। তবে দালালরা এই রাস্তাটা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। দালালরা ৮-৯ লাখ টাকায় আগ্রহীদের সাইপ্রাসে নিয়ে আসে। তারা এক ব্যাংক ডকুমেন্টে শুধু নাম বদলে অসংখ্য স্টুডেন্টকে দিয়েছে। এমন করে এই সম্ভাবনাময় বাজারটি নষ্ট করেছে। এখানে আসার আগে প্রথম বছরের টিউশন ফি পরিশোধ করা থাকে। সমস্যা হয় পরের বছর থেকে। অনেকে দ্বিতীয় বছরে গিয়ে সেমিস্টার ফি দিতে পারে না। দালালরা এখানকার কলেজ থেকে কমিশন পায়। স্টুডেন্ট থেকেও টাকা পায়।

আড়াই কোটি টাকায় রেসিডেন্ট পারমিট : মাত্র তিন লাখ ইউরোর সমপরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে সাইপ্রাসের রেসিডেন্ট পারমিট বা নাগরিকত্ব পেতে পারেন যে কেউ। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার মতো। এ বিষয়টি এখনো বহুল প্রচারিত নয়। এই রেসিডেন্ট পারমিটের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশটির নাগরিকত্ব লাভ করা যাবে। এটি আমাদের জন্য একটি ভালো সংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে।

মার্চেন্ট মেরিন চুক্তি আটকে আছে : বাংলাদেশের সঙ্গে সাইপ্রাসের দীর্ঘ এক যুগ ধরে ঝুলে থাকা মার্চেন্ট মেরিন চুক্তিটি এখন বাংলাদেশ সরকারের কাছে আটকে আছে। সাইপ্রাসের রাষ্ট্রদূত হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া আবদুল মোতালেব সরকার জানান, সাইপ্রাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক তদবিরের পর এই চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সাইপ্রাসের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অনেকদিন ধরে এ ব্যাপারে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যে কাক্সিক্ষত এই চুক্তি স্বাক্ষর হলে আমরা সাইপ্রাসে মেরিন পেশাজীবী, আইসিটি স্পেশালিস্ট, গ্র্যাজুয়েট নার্স পাঠাতে পারব। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সীমিত পরিমাণে গার্মেন্ট পণ্য, চামড়াজাত পণ্য সাইপ্রাসে যাচ্ছে। ৬-৭ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হচ্ছে। সাইপ্রাসের এগ্রিকালচারাল সেক্টরেও কাজ করছে বাংলাদেশের অনেক লোক। তিনি বলেন, অনেকে এখানে পড়তে এসে লেখাপড়া শেষ না করে কাজে মনোযোগ দিয়ে অবৈধ হয়ে যায়। এটা মোটেও ঠিক নয়।

সাইপ্রাস হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে : সাইপ্রাসকে ঘিরে রেখেছে গ্রিস, তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল। ২০০৪ সালের ১ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্য পদ পায় সাইপ্রাস। ৯ হাজার ২৫১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটি ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য ভূস্বর্গ। সাইপ্রাসের দুই অংশ মিলিয়ে লোকসংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। সাগরবেষ্টিত এই দ্বীপরাষ্ট্রের একাংশ তুর্কি সাইপ্রাস ও অপরটি গ্রিক সাইপ্রাস। সাইপ্রাসের উত্তর অংশ ফামাগুস্তা এলাকা তুরস্কের দখলে থাকায় সেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর