বুধ ও বৃহস্পতিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো গ্লোবাল কনফারেন্স ফর মিডিয়া ফ্রিডম। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে সাংবাদিকরা অংশ নেন। সম্মেলনের বিভিন্ন সেশন থেকে উঠে এসেছে দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারের উত্থান স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বড় বাধা তৈরি করেছে। কেবল অর্থনৈতিক চাপ তৈরি নয়, সাংবাদিকদের হত্যা, জেল ও নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে সত্য গোপন করার চেষ্টা এখন এক বৈশ্বিক প্রবণতা। সত্য প্রকাশে অবিচল থেকেই গণমাধ্যমগুলোকে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমগুলো যে কঠিন সময় পার করছে, তা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এর যৌথ আয়োজক যুক্তরাজ্য ও কানাডা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে এটি প্রথম কোনো বৈশ্বিক সম্মেলন। যার মূল প্রতিপাদ্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করুন (ডিফেন্ড মিডিয়া ফ্রিডম)। লন্ডনের কানাডা ওয়াটার এলাকার ‘প্রিন্ট ওয়ার্কস’ মিলনায়তনে সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় পরবর্তী করণীয় হিসেবে পাঁচটি উদ্যোগের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের নেতৃত্বে বৈশ্বিক ঐকমত্য গঠন এবং সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও আইনি সহায়তা প্রদান এবং যুক্তরাজ্যের তরফ থেকে ৩০ লাখ পাউন্ড বরাদ্দের ঘোষণা। পরে সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী আমাল ক্লোনি বলেন, বিশ্বের ১৩ শতাংশ মানুষ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভোগ করছে। কেবল পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে একটি দূতাবাসে হত্যা করা হলেও বিশ্বনেতারা কেবল নিন্দা জানানো ছাড়া কিছুই করেননি। আফ্রিকার একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক নিজের চেহারা ঢেকে সংবাদ সম্মেলনে নিজের ?নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেন। সম্মেলনে একটি যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়। এতে স্বাধীন মত প্রকাশের অনুকূল পরিবেশ তৈরি, ইন্টারনেটের সার্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং মত প্রকাশের কল্যাণকর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কাউন্সিল ফর ল’ অ্যান্ড ডেমোক্রেসির টোবি মেনড্যাল বলেন, প্রযুক্তির বিকাশ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব সামনের দিনগুলোতে মতপ্রকাশ ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ক্ষেত্রে আরও বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে। গণমাধ্যম এবং সরকারকে একসঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। পাবলিক মিডিয়া অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী স্যালি এন উইলসন বলেন, গণমাধ্যম স্বাধীন না হলে মানুষ তথ্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক নয়। ‘গণমাধ্যমের মালিকানার ওপর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নির্ভরশীল : বিতর্ক’-শীর্ষক এক সেশনে বক্তারা বলেন, যারা প্রকৃত সাংবাদিকতার পক্ষে, তারা ভয়ে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। কিন্তু অসাধু ব্যক্তিরা ভিন্ন উদ্দেশে গণমাধ্যমে বিনিয়োগ করছেন। এটিও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা। ফিলিপাইনের র?্যাপলার অনলাইন নিউজের প্রধান নির্বাহী মারিয়া রেসা তাঁর দেশে গণমাধ্যমের ওপর প্রেসিডেন্ট দুতার্তের নিপীড়নের কথা তুলে ধরেন। সম্মেলনের একটি সেশনে বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনে সরকারের বলপ্রয়োগের অভিযোগ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক। যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হ্যারিয়েট বল্ডউইন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে যুক্তরাজ্য এসব বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সম্মেলনে গণমাধ্যমের চলমান রূপান্তর, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণমাধ্যমের গুরুত্ব, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়াসহ গণমাধ্যমের নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সেশনে আলোচনা হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, একাত্তর টিভির সিনিয়র সাংবাদিক ফারজানা রূপা।