সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মসলার দাম বাড়ায় পাঁচ সিন্ডিকেট

রুকনুজ্জামান অঞ্জন, ঢাকা ও মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মসলার দাম বাড়ায় পাঁচ সিন্ডিকেট

কোরবানির ঈদের আগে প্রতি বছরই মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর পেছনে রয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাঁচ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। মূলত এই ব্যবসায়ীরাই গরম মসলা আমদানির সঙ্গে জড়িত। পরে এদের কাছ থেকে পাইকাররা সারা দেশে পণ্য সরবরাহ করেন। ফলে এই আমদানিকারকরা যে দাম নির্ধারণ করে দেন, তার ওপরই নির্ভর করে দেশে মসলা জাতীয় পণ্যের খুচরা পর্যায়ে দাম কতটা বাড়বে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে পিয়াজ, আদা, রসুন, জিরা, দারুচিনি, এলাচের মতো পণ্য যেগুলো কোরবানির ঈদে চাহিদা বাড়ে সেসবের দাম বেশি বেড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করে পণ্যের বিক্রয়মূল্যের তালিকা পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। গতকাল পাঠানো ওই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক মাসে দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ দশমিক ৯১ শতাংশ, রসুন ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, দারুচিনি ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং এলাচ ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং মানভেদে আদার দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। টিসিবির তালিকায় গতকাল কেজিপ্রতি পিয়াজের দাম ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, রসুনের দাম ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, আদা ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা এবং দারুচিনি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দর দেখানো হয়েছে। 

এই প্রতিবেদক  গতকাল রাজধানীর মিরপুরের বেশ কয়েকটি  দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখেন, ওইসব দোকানে কেজিপ্রতি পিয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আদা ১৫০ টাকা, দারুচিনি ৪৪০ টাকা, জিরা ৪০০ টাকা, গোলমরিচ ১২০০ টাকা, এলাচ ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক মাস আগেও পিয়াজ ২৫ টাকা, রসুন ৯০ টাকা, দারুচিনি ৩৫০ টাকা, গোলমরিচ ৮০০ টাকা এবং এলাচ ১৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গত বুধবার মসলা জাতীয় পণ্য আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি। ওই সভার পরও বাজারে মসলা জাতীয় পণ্যের দামে কোনো হেরফের হয়নি। বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য, সরবরাহ ও মজুদ পরিস্থিতি তদারকি  জোরদার করার জন্য ঢাকাসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যাতে কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট না হয় বা মূল্যবৃদ্ধি না পায় সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।  মসলার দাম বাড়ায় কে : অভিযোগ রয়েছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাঁচ আমদানিকারকের কারসাজিতেই অস্থির মসলার বাজার। মূলত চট্টগ্রামের এই বৃহত্তম পাইকারি বাজার থেকেই সারা দেশে মসলা সরবরাহ করা হয়। সে কারণে এই বাজারের ব্যবসায়ীরাই দাম বাড়ানোর নেপথ্যে কাজ করেন। চাক্তাই খাতুনগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আমদানিকারকরা পর্যাপ্ত আদা, রসুন, পিয়াজ, দারুচিনি, জিরা, পোস্তাদানা, ধনেপাতা, তেজপাতাসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্য মসলা জাতীয় পণ্য আমদানি করেছেন। মজুদও রয়েছে পর্যাপ্ত। কিন্তু পাঁচ আমদানিকারকের কারসাজিতে গত এক মাস ধরেই মসলার বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি। জানা গেছে, এই সিন্ডিকেটের নেপথ্যে রয়েছেন আমদানিকারক উৎপল চৌধুরী মানিক, অমর দাশ, আবু আহমেদ, মো. ওসমান এবং জাফর আলম। তাদের কারসাজিতে এক মাসের ব্যবধানে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে মসলার কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ কয়েকশ টাকা পর্যন্ত। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আমদানিকারক অমর দাশ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারতে বৃষ্টির কারণে গত কয়েকদিনে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। আর আমদানি মূল্য বাড়ায় দেশেও এসব মসলা জাতীয় পণ্যের দাম কিছুটা  বেড়েছে। আবু আহমেদ অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা কারসাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করতে চাননি। অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, আগে কোরবানি কিংবা  রোজার সময় বাজারে কারসাজি হতো। ওই সময় বাজার মনিটরিং জোরদার থাকার কারণে এখন ‘কারসাজি’র ধরন কিছুটা পাল্টিয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। তারা কোরবানির ঈদের এক মাস আগে থেকেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি ও মসলা পাইকার সোলাইমান আলম বাদশা বলেন, ‘আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলে বিভিন্ন মসলার দাম বাড়িয়েছে। তারা দাম বাড়িয়েছে বলেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পাইকারদের।’কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের এই পাইকারি বাজারের সিন্ডিকেট চক্র মোকাবিলার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের  জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, কোরবানির ঈদের আগে মসলাসহ অন্যান্য পণ্যের বাজার অস্থিরতা ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। বিশেষ করে  দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বিগত সময়ে পণ্য কারসাজিতে জড়িতদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কোনো মজুদদার বাজার কারসাজির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর