শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দেশে বার্নের চিকিৎসা সূচনা করেন বঙ্গবন্ধু

মাহবুব মমতাজী

দেশে বার্নের চিকিৎসা সূচনা করেন বঙ্গবন্ধু

দেশে প্রথম বার্ন চিকিৎসার উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসার সময় তিনি লক্ষ্য করেন, আগুনে অনেকের হাত-পা, দেহের অংশবিশেষ পোড়া। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধু। নিয়ে আসা হয় দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাদের মাধ্যমেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রথম ৫ শয্যার বার্ন ইউনিট চালু করে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়। সেই ৫ শয্যা থেকেই শুরু, এখন তা বাংলাদেশে ৫০০ শয্যার অত্যাধুনিক বার্ন ইনস্টিটিউটে উন্নীত হয়েছে।

একান্ত আলাপকালে এ তথ্য জানান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। এ বিশেষজ্ঞ            চিকিৎসক জানান, অনেকেই দেশে বার্ন চিকিৎসা শুরুর ইতিহাস জানেন না। বার্ন রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয় মূলত বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় আহতদের উন্নত চিকিৎসা দিতেই তিনি ভারতের পাঞ্জাবের রুদিয়ানি থেকে একজন অর্থোপেডিক্সকে দেশে আনেন। তিনি হলেন- ডা. গাস্ট। এ চিকিৎসক এসে দেখেন আহত অনেকের হাত-পা শরীর পুড়ে গেছে। তিনি তাদের বার্নের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি অনুভব করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে ভারতের পাঞ্জাবের বার্নের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. বেজলীলকে নিয়ে আসেন। আর হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে মেডিকেল কর্মকর্তা হিসেবে সবেমাত্র কাজ শুরু করেছেন তিনি (সামন্ত লাল সেন)। তখন তিনি তরুণ চিকিৎসক। তাকে সে সময় ঢাকায় বদলি করে আনা হয়। তিনি আর ডা. বেজলীলসহ মাত্র দু-তিনজনের একটি টিম দিয়ে ৫ শয্যা দিয়ে বার্নের ইউনিট চালু হয়। তখন থেকেই আগুনে পোড়া রোগীদের সেখানে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হতো। এরপর ১৯৮২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সি ওয়ার্ডে ডা. শহিদুল্লাহ বার্ন ইউনিটকে একটু সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। সেখানে ৫০ শয্যার বার্ন ইউনিট চালু করা হয়। এরপর উন্নীত করে ১০০ শয্যা করা হয় এবং তা থেকে এখন ৫০০ শয্যায় অত্যাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আবার বার্নের অত্যাধুনিক চিকিৎসার জন্য  বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেন। তার উদ্যোগে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুলের জ্ঞান তাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সড়কে প্রায় দুই একর জমিতে নির্মাণ করা হয় ১৮ তলা ইনস্টিটিউট ভবন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ মহতী উদ্যোগের সুফল এখন আমরা পাচ্ছি। ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ নামে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। এর মধ্য দিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে আরেক ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। শুধু পোড়া রোগীর চিকিৎসাই নয়, এখানে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ব্যবস্থাও রাখা হয়। বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, দেশে বছরে প্রায় ৬ লাখ মানুষ আগুনে দগ্ধ হয়। আগুনে পোড়া এই রোগীদের উন্নত চিকিৎসার সব সুবিধাই এখানে রয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর থেকে জরুরি বিভাগ চালু হয়েছে। দুর্ঘটনায় যদি কারও অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়, তাহলে এখানে ৬ ঘণ্টার মধ্যে সার্জারি করে তা জোড়া লাগানো সম্ভব। এই ইনস্টিটিউটে ৫টি ব্যাচে ৯২ জন পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট রয়েছেন। গত বছরের ৪ জুলাই থেকে আউটডোরে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত আউটডোরে প্রায় ১৩০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ইনডোরে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৩০০ রোগী। সব মিলিয়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে ২২৬ জনের মতো। এখানে রয়েছে ১০টি অপারেশন থিয়েটার। রয়েছে অত্যাধুনিক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। এর শয্যা রয়েছে মোট ২০টি। ১০টি প্লাস্টিক সার্জারির এবং ১০টি বার্নের। ৭৪টি আছে কেবিন।

এর মধ্যে ভিভিআইপি একটি, ভিআইপির জন্য চারটি। প্রথমবারের মতো এখানে চালু করা হয়েছে স্কিন ব্যাংক। আগুনে পোড়া রোগীরা নতুন চামড়া লাগানোর সুবিধা এই ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন। আর রক্তদান, মরণোত্তর চক্ষুদানের মতো অনেকেই এই ব্যাংকে মরণোত্তর চামড়া দান করে যেতে পারবেন। সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ইনস্টিটিউটের জন্য আনা হয়েছে। বেশির ভাগ সরঞ্জামাদি এসেছে জার্মানি থেকে। এ ছাড়া ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও কিছু আসে। চানখাঁরপুলের জ্ঞান তাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সড়কে প্রায় দুই একর জমিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ ১৮ তলা ভবনে এই ইনস্টিটিউট। এটি নির্মাণে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়। পরের মাসের ২৯ তারিখ মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। এতে এখন চিকিৎসকদের অনুমোদিত ২৩৯টি পদ আছে। পদায়ন করা পদ আছে ১৯টি এবং শূন্য পদ আছে ২২০টি। আর সেবা তত্ত্বাবধায়ক ও নার্সের অনুমোদিত ৬৪০টি পদ আছে। পদায়ন করা পদ আছে ৫৩টি এবং শূন্য পদ আছে ৫৮৭টি।

সর্বশেষ খবর