রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মোটরসাইকেল দিয়ে অভিনব কায়দায় ছিনতাই করে আসছিল একটি চক্র। নিজেদের পরিচয় আড়ালে অত্যন্ত চৌকশ ছিল চক্রের সদস্যরা। ছোঁ মেরে ছিনতাই করত চক্রটি। নিমিষেই মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ভেনিটিব্যাগ বা পার্স নিয়ে উধাও হয়ে যেত। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের জালে চক্রের প্রধানসহ দুজন ধরা পড়েছে। তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম শাওন ও মো. ফারুক হোসেন।
পুলিশ জানায়, গত চার মাসে অন্তত ৭টি ঘটনায় প্রায় ৭০ লাখ টাকা ছিনতাই করে চক্রের সদস্যরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। তবে ঘটনার পরে দ্রুত সটকে পড়ায় জড়িতদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে চক্রের সদস্যদের গতিবিধি গভীর পর্যবেক্ষণে পুলিশের জালে আটকা পড়ে চক্রের সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত নম্বরবিহীন দুটি মোটরসাইকেল। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, উত্তরায় একটি চক্র মোটরসাইকেল দিয়ে ছিনতাই করে আসছিল। যার শুরুটা গত ১৫ জুলাই বিকালে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে ৫/বি সড়কে ১৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে। ১৮ আগস্ট গাউসুল আজম এভিনিউতে আরেকটি ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এভাবে গত ৪ মাসে ৭টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়। এভাবে ধারাবাহিক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) সাদ্দাম হোসাইনের নেতৃত্বে একটি দল মাঠে নামে। ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে আমাদের মনে হয়েছে এটি সাধারণ ছিনতাইয়ের ঘটনা নয়। চক্রটি অভিনব কায়দায় ছিনতাই করে আত্মগোপন করছে। ডিসি মহিদুল আরও বলেন, ছিনতাইকারীরা এমনভাবে হেলমেট ব্যবহার করত যেন তাদের চেনা না যায়। কখনো মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বর আবার কখনো নম্বর প্লেট ছাড়াই অপরাধমূলক কাজগুলো করত। তাদের পরিচয় শনাক্তে পুলিশের বিশেষ টিমের সদস্যরা উত্তরায় বিভিন্ন ব্যাংকের দারোয়ান, ব্যাংকের সামনে রিকশা বা উবার চালক বেশে নজরদারি করছিল। গত ১৪ অক্টোবর উত্তরা পশ্চিম থানার ৭ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণিতে ঢাকা আই-কেয়ার হাসপাতালের সামনে সন্দেহজনক মোটরসাইকেল দেখে তাদের থামানোর সংকেত দেওয়া হয়। এ সময় একজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে অন্যদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা জানান, তারা বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, এটিএম বুথ এবং অর্থলগ্নি সংস্থার সামনে অবস্থান করে লোকজনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করত। লোকজন নগদ টাকা তুলে চলে যাওয়ার সময় তাদের অনুসরণ করে সুবিধাজনক স্থানে মোটরসাইকেল যোগে গতিরোধ করে বা ছোঁ মেরে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেত। ছিনতাইকৃত মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। ছিনতাইয়ের টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল ও জমি কেনেছে চক্রের সদস্যরা। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গোপালগঞ্জে অভিযান চালিয়ে সাইফুল ইসলাম শাওনের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি ছিনতাই মামলা এবং ফারুকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুটি ছিনতাই মামলা রয়েছে।