মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

দ্বিতীয় দফা বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

প্রতিদিন ডেস্ক

দ্বিতীয় দফা বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয়ৃ দফা বন্যায় পাকা রাস্তায় পানি উঠেছে। বানভাসিরা নৌকাযোগে বাড়ি থেকে স্কুলে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন। ছবিটি গতকাল কুড়িগ্রাম সদরের মধ্যকুমরপুর বাজার এলাকা থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দ্বিতীয় দফা বন্যায় কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গাইবান্ধায় বেড়েই চলেছে নদ-নদীর পানি। লালমনিরহাটে ৯৬ সালের বন্যার মতো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বগুড়ার শেরপুরে বন্যায় ১০ গ্রামের কয়েক শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজীর মুহুরী নদী ও পরশুরামের কহুয়া নদীর আটটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাজবাড়ীতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

কুড়িগ্রাম : উজানের ঢলে ও অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামে হু হু করে সব নদ-নদীর পানি নতুন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিতীয় দফার এই বন্যায় নদ-নদী তীরের চর ও দ্বীপচরগুলো নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার দেড় লক্ষাধিক মানুষ।

গাইবান্ধা : বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপরে, ঘাঘট নদীর পানি ৪১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং তিস্তার পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়ার পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও তা এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। নীলফামারী : জেলার ডিমলায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দিন দিন বেড়েই চলছে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাট :  উজানের গজলডোরের সব কটি ফটক খুলে দেওয়ায় প্রবল স্রোত ও পানি বৃদ্ধির ২৪ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তিস্তা। লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে জেলার ৫ উপজেলায় তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের দেড় লক্ষাধিক মানুষ আবারও পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া তিস্তা ব্যারাজ রক্ষা ফ্লাড বাইপাস সড়কটি হুমকির মুখে পড়েছে। ১৯৯৬ সালে তিস্তার ভয়াবহ বন্যার পর ২০২০ সালে একই রকম বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদৎসীমা অতিক্রম করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ তিস্তা পাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। ভাঙনে গৃহহারা হয়েছেন পাঁচ শতাধিক পরিবার। বগুড়া : পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পৌর শহরের ৩ নং ওয়ার্ডসহ উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেক বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক শ পরিবার। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন বানভাসী মানুষ। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যার চতুর্থ দিনেও জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দিনের তুলনায় বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হওয়ায় নদ-নদীর পানি কমলেও পানি বেড়েছে হাওর এলাকায়। গতকাল সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৪১ মিলিমিটার।

এদিকে বন্যার কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় লাখো পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। প্লাবিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অপরদিকে গতকাল সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পানি কমলেও এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে শহরের অনেক এলাকা। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। ফেনী : তিন দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজীর মুহুরী নদী ও পরশুরামের কহুয়া নদীর আটটি স্থানে বাঁধ ভেঙে দুই উপজেলার ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ফুলগাজী বাজারের পশ্চিম অঞ্চলে শ্রীপুর সড়ক এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবেশ করায় ফুলগাজী বাজারের বিভিন্ন স্থানে দোকানপাটে পানি প্রবেশ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহির উদ্দিন জানান, রবিবার সন্ধ্যায় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১.৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানির চাপে ফুলগাজীর মুহুরী নদীর ৪টি স্থানে ভেঙে যায়। রাতে নতুন করে মুহুরী নদীর আরও ২টি স্থানসহ ৬টি স্থানে ও পরশুরামের কহুয়া নদীর ২টি স্থান ভেঙে যায়। বর্তমানে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

রাজবাড়ী : উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের প্রভাবে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় রাজবাড়ীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে এ বছর রাজবাড়িতে বন্যার শঙ্কা রয়েছে, যা দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে আগস্টের পর থেকে নদীতে চলছে ভাঙন।

সর্বশেষ খবর