বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

প্রাথমিকের পাঠদান রেডিওতে কথা বলা যাবে শিক্ষকের সঙ্গে

আকতারুজ্জামান

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর গত এপ্রিল থেকে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে ‘ঘরে বসে শিখি’ কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। কিন্তু অনেক পরিবারে টেলিভিশন সুবিধা না থাকায় সরকার রেডিওর মাধ্যমে প্রাথমিকে পাঠদান কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। খুব শিগগিরই এ পাঠদান শুরু হবে বলে জানা গেছে। রেডিওর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা সম্ভব হবে বলে মনে করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের একাডেমিক যে কোনো সমস্যা সমাধানে সরাসরি কথা বলা যাবে শিক্ষকের সঙ্গে। টোল ফ্রি ৩৩৩৬ নম্বরে ফোন করে বিনামূল্যে পাঁচ মিনিট শিক্ষাসেবা নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্র দিয়ে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের ৫০ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়িতে টেলিভিশন রয়েছে। এসব পরিবারের শিক্ষার্থীরা সংসদ টিভির মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছে। বাকিরা এ সুবিধা পাচ্ছে না। এ ছাড়া শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বাড়িতে বেতার/ রেডিও আছে। তবে ৯৫ শতাংশ বাড়িতে মোবাইল রয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, অ্যান্ড্রয়েড বা ফিচার ফোন যাই হোক সব ফোনের মাধ্যমে (এফএম) রেডিওতে এক্সেস করা যায়। এটি ব্যবহার করেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হবে। শিক্ষার্থীরা কিশোর বয়সের নানা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ব্যাপারেও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারবেন ৩৩৩৬ নম্বরে ফোন করে। সরকারের এটুআইয়ের সহযোগিতায় এ প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্নের পথে। শিগগিরই শিক্ষার্থীরা এসব সেবা নিতে পারবেন বলে জানা গেছে।

করোনাকালেও অনলাইনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী বছর থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তাই পরীক্ষা না থাকলে কীভাবে শিশু শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে তা অনলাইন ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের গণিতে দক্ষ করতে গণিত অলিম্পিয়াডের অনলাইন প্রশিক্ষণও শিগগিরই শুরু হবে।

চলমান বন্যায় অনেক এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যা নেমে যাওয়ার পর এর ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা মাঠপর্যায় থেকে সংগ্রহ করছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর এসব ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় একটি অ্যাকশন প্ল্যানও প্রস্তুত করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আসছে। করোনার সময়ে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। শিক্ষকদেরও নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যথাযথ প্রশিক্ষণের ফলে শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের মতোই লালন করেন শিক্ষকরা। শাস্তি নয় মোটিভেশন দিয়েই শিক্ষকদের যোগ্য করে গড়ে তুলছে সরকার। মেধাবীরা এখন প্রাথমিকের শিক্ষক হচ্ছেন। প্রাথমিক শিক্ষায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় সেটি অব্যাহত থাকবে।

গণশিক্ষা সচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য বরাদ্দের সংকট নেই। চাহিদা পেলেই বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর অবকাঠামোর কাজ শুরু করতে পারব। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে সরকারের নানা ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে বাড়ছে শিক্ষার্থী সংখ্যাও। জানা গেছে, ২০০৮ সালে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ভর্তি ছিল ৮৫ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে ৯৭ দশমিক ৯৫ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসছে। উপবৃত্তি, স্কুল ফিডিং প্রকল্প, বই বিতরণসহ নানা ইতিবাচক কার্যক্রমের কারণে শিক্ষার্থী ভর্তি বেড়েই চলেছে।

সর্বশেষ খবর