শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা নিয়ে বেসুরে কথা বলা যাবে না

-অধ্যাপক ডা. মো. হানিফ

করোনা নিয়ে বেসুরে কথা বলা যাবে না

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. হানিফ বলেছেন, প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে সাবধানতা বাড়াতে সরকারকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যে কোনো কাজ করার জন্য সরকার, জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয় জরুরি। সবাইকে এক সুরে কথা বলতে হবে। করোনার মতো বিষয় নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা বেসুরে কথা বলেন। এ নিয়ে বেসুরে কথা বলা যাবে না। এতে চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ বা বিশেষজ্ঞ- সবাইকে এক সুরে কথা বলতে হবে। এখানে রাজনীতিবিদদের কমিটমেন্ট সবচেয়ে বেশি জরুরি। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এসব কথা বলেন। আলাপচারিতায় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের এই অধ্যাপক বলেন, ‘করোনায় আমাদের পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এখন বলা হচ্ছে, অ্যান্টিজেন টেস্ট কিছু সুনির্দিষ্ট হাসপাতালে করতে হবে। কিন্তু সেখানে তো সবার সুযোগ কম। করোনার সাধারণ পরীক্ষায়ও দেখা যায়, এলিট শ্রেণি দুই-তিনবার করে টেস্ট করছে। অথচ সাধারণ মানুষ একবারও সুযোগ পাচ্ছে না। সবাইকে পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বড় বড় প্রভাবশালী অ্যাডভান্স দেশগুলো যেখানে করোনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের এ নিয়ে অবহেলার কোনো সুযোগই নেই।’ তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা, করোনা সংক্রমণের হার বা মৃত্যু প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলা খুবই কঠিন। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ পরীক্ষা বা আইসোলেশন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা হচ্ছে না। কিছু লোক মাস্ক পরলেও বড় একটি অংশেরই এটি নিয়ে অনীহা আছে। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর যে প্রক্রিয়ায় আইসোলেশনে থাকার কথা, সেটিও বিধি অনুযায়ী মানা হচ্ছে না। এ ছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যখন বলেন, ভ্যাকসিন লাগবে না, তখন জনগণ এটি বিশ্বাস করে। এতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রাণঘাতী করোনা নিয়ে এভাবে মন্তব্য করা উচিত নয়। অধ্যাপক ডা. হানিফ বলেন, ‘আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যু বা শনাক্ত নিয়ে সময়োপযোগী সমীক্ষা করার সুযোগ কম। অনেকে কোনো পরীক্ষা না করেই উপসর্গ নিয়ে বাসায় থেকেই ভালো হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ করোনার পাশাপাশি অন্য রোগ নিয়ে মারা যাচ্ছেন। তাদের করোনা রোগী হিসেবে ধরা হচ্ছে না। তাই আমরা করোনার সামগ্রিক চিত্র সম্পর্কে জানি না। এটি করতে হলে অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়ায় করতে হবে।’ শিশুবিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, ‘করোনা ইস্যুতে স্বাস্থ্য খাতে যারা ইতিবাচকভাবে কাজ করতে চান, তাদের সহযোগিতা করতে হবে। সরকারকে উদাত্ত আহ্বান জানাতে হবে, করোনা পরিস্থিতিতে যে যেভাবে পারেন সহযোগিতা করুন। সবাইকে নিয়ে সরকার ঐক্যবদ্ধ আহ্বান জানালে জনগণ কেন শুনবে না? জনগণ সব সময় শোনে। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ করা হয়, জনগণ কথা শোনে না। এটা ঠিক নয়। জনগণকে কথা শোনার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে।

 জনগণকে সব সময় দোষারোপ করা হয়। কারণ যারা এসব করেন, তারা জানেন, জনগণ কখনোই সামনে এসে দাঁড়াবে না। আমি মনে করি, জনগণের কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমাদের মতো এলিটদের। আমরাই আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। জনগণকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে।’

সর্বশেষ খবর