বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনামুক্ত হলেও বাসা বাঁধছে অন্য রোগ

রোগীরা দুর্বলতা, প্রেসার কমে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি চুল পড়া, বিষণœতা, ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন

জিন্নাতুন নূর

করোনামুক্ত হলেও বাসা বাঁধছে অন্য রোগ

করোনামুক্ত হওয়ার পর মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে অন্য রোগ। করোনা শরীর ছেড়ে গেলেও রেখে যাচ্ছে নতুন নতুন শারীরিক সমস্যা।  রোগীরা জানান, করোনা নেগেটিভ হলেও তারা শারীরিক দুর্বলতা, প্রেসার কমে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চুল উঠে যাওয়া, বিষণ্নতা, ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে চিকিৎসকরা জানান, করোনা রোগীরা একদম ভালো হয়ে যাওয়ার পরও তাদের অন্তত ছয় মাস চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। তারা আরও বলেন, রোগীরা করোনামুক্ত হয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে আবার নতুন কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আর এই নতুন রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনা সেরে যাওয়ার পর একটি দলকে পাওয়া যাচ্ছে যারা স্ট্রোকের মতো লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসছেন। এদের কেউ কেউ স্নায়ুবিক সমস্যা নিয়ে আসছেন। কেউ পেশির সমস্যা নিয়ে আসছেন। আরেকটি দল মানসিক সমস্যা নিয়ে আসছেন। এই দলের রোগীরা প্রচ- ক্লান্তিতে ভুগছেন, তাদের গা ম্যাজমেজে ভাব থাকে। কারও কারও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তাদের খাওয়া ও ঘুমের আগ্রহ কমে যাচ্ছে এবং তারা বিষণœতায় ভুগছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনামুক্ত হওয়ার পরও আমরা কিছু রোগীকে অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভুগতে দেখছি। একে বলা হয় ‘পোস্ট ভাইরাল  এস্তেনিয়া’। এর ফলে অনেক রোগী করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, রুচিহীনতা, নিদ্রাহীনতা, ছটফট করার মতো সমস্যায় ভুগছেন। কারও কারও ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে শরীরে সুগারের মাত্রা বেশি দেখা যাচ্ছে। কারও ক্ষেত্রে অনিয়মিত অ্যালার্জি দেখা যাচ্ছে। তাদের ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ভেজালমুক্ত ও পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি টাটকা ফলমূল, শাক-সবজি খেতে হবে। পাশাপাশি হাঁটাচলা ও শারীরিক কসরত করতে হবে। মনোবল চাঙ্গা রাখতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনামুক্ত হওয়ার পরও যাদের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে তাদের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া আগে থেকেই যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যেমন-লিভার, কিডনি, হার্ট, স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি। আবার যাদের আগে এক ধরনের শারীরিক সমস্যা ছিল করোনামুক্ত হওয়ার পর তাদের নতুন করে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আগে যাদের হার্টের সমস্যা ছিল না তাদের নতুন করে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসির সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনামুক্ত হয়েছি প্রায় আড়াই মাস। কিন্তু এখনো শরীর ভীষণ দুর্বল। তিনি জানান, একটানা কাজ করলে হাঁপিয়ে উঠছেন। হাঁটতে গেলে ক্লান্তি অনুভব হয়। শ্বাস নিতেও তার কষ্ট হচ্ছে। দম বন্ধ লাগে। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে কাবেরীর মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। কাবেরী আরও জানান, এখন তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রোটিন জাতীয় খাবার খাচ্ছেন। এর সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন ২০ হাজার পাওয়ারের ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খাচ্ছেন। কিন্তু তারপরও তার প্রেসার কম। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শাহজাহান ম-ল (৭৪) করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগেও বিভিন্ন ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু করোনামুক্ত হওয়ার পর নতুন করে আরও বেশ কিছু সমস্যায় তাকে ভুগতে হচ্ছে। তার শরীরের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হঠাৎ করে কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া মধ্যরাত থেকে সকালের দিকে প্রেসার হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র পেশাজীবী করোনামুক্ত হয়ে সম্প্রতি কাজে যোগ দিলেও তার শরীর এখনো দুর্বল। সামান্য কাজেই হাঁপিয়ে উঠছেন তিনি। অথচ আগে টানা কয়েক ঘণ্টার পরিশ্রমেও তিনি সহজে ক্লান্ত হতেন না। শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে নতুন সমস্যা হিসেবে মাথাব্যথাও যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলছেন তিনি। খাচ্ছেন দুধ-ডিমের মতো পুষ্টিকর খাবার। একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, করোনামুক্ত হওয়ার পর অনেক দিন ধরে শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করছেন। তার ঘুমেরও খুব সমস্যা হচ্ছে। হঠাৎ করে ওজনও কমে  গেছে। এ ছাড়াও হঠাৎ করেই কারণ ছাড়া বিষণœতায় ভুগছেন। তিনি জানান, করোনামুক্ত হওয়ার এক মাস পর যখন তিনি প্লাজমা দেওয়ার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট করাতে যান তখন জানতে পারেন যে তার শরীরে জীবাণু ছিল। যদিও সেই জীবাণু থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা ছিল না, কিন্তু তার শরীরে অ্যান্টিবডি হয়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা রোগীরা একদম ভালো হয়ে যাওয়ার পরও তাদের ছয় মাস চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। বিশেষ করে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জটিল অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এই কথা বেশি প্রযোজ্য। আবার যে করোনা আক্রান্তরা হালকা শারীরিক সমস্যা নিয়ে বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন তাদেরও বেশ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ তাদের পুনরায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ ছাড়া করোনামুক্ত হওয়ার পরও খাওয়ার রুচি হচ্ছে না। কারও প্রস্রাব কম হচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। যে কাশি অনেক দিন ছিল না তা আবার বেড়ে গেছে। আবার অনেকের পেটে মাঝেমধ্যেই ব্যথা হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও বাড়ি গিয়ে রোগীদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। করোনা থাকা অবস্থায় সবাইকে নিরাপদ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আর এখন যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি আগামীতেও তা মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে জীবনযাত্রায় অনেকগুলো পরিবর্তন আনতে হবে। পরিমিত খাবার খেতে হবে, মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর