ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল দেশের নদী ও মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে নদীগুলোতে ফেরি চলাচল সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিরাজগঞ্জ : ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট আবার কখনো থেমে যানজট শুরু হয়। এতে চালক ও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় কাঁচামাল পরিবহন ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগের শিকার হন। বিশেষ করে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো আটকা পড়ায় রোগী নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ঘন কুয়াশার কারণে রাত ১০টা থেকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্ন ঘটে। কুয়াশায় দেখতে না পারায় চালকরা ধীরগতিতে চালানোর ফলে সেতুর পশ্চিমপাড়ে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন শুরু হয়। ভোররাতে সেতুর ওপর কুয়াশার ঘনত্ব অতিরিক্ত বেড়ে যায়। এ কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দেওয়ায় সেতু কর্তৃপক্ষ উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী টোলপ্লাজা বন্ধ রেখে সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ ছাড়াও পাটুরিয়া-দৌলদিয়া ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এ দুই কারণে দীর্ঘ যানযানজট শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর টোলপ্লাজা খুলে দেওয়া হলে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু সাড়ে ৯টার দিকে সেতুসহ পূর্বপাড়ে তীব্র যানজট দেখা দেওয়া আবারও টোল আদায় বন্ধসহ সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে পশ্চিমপাড়ে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট শুরু হয়। আধাঘণ্টা পর টোল আদায় শুরু করা হলে যানচলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। দুপুর ৩টা পর্যন্ত থেমে থেমে যানজট ছিল। যানজট নিরসনসহ গাড়িগুলো যাতে ওভারটেক করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে না তোলে এ জন্য পুলিশ সর্তক অবস্থায় ছিল।ট্রাকচালক আবুল হোসেন জানান, তীব্র যানজটের কারণে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সেতুর পশ্চিমপাড় কড্ডার মোড় পর্যন্ত মাত্র ২৫ কিলোমিটার আসতে সময় লেগেছে প্রায় নয় ঘণ্টা। ঠিক তেমনি পশ্চিমপাড় থেকে এলেঙ্গা যেতেও লাগছে প্রায় ৮-৯ ঘণ্টা। একদিকে ঘন কুয়াশা ও অন্যদিকে দীর্ঘ সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে রাতে পড়েছে ঘন কুয়াশা আর দিনে সূর্যের দেখা মেলেনি। এতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শীতে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষরা। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। হঠাৎ শীত পড়ার কারণে বিপাকে পড়েছে শিশুসহ বয়স্করা।
মাদারীপুর : ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টা থেকে গতকাল সকাল ৭টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরে কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
মুন্সীগঞ্জ : ঘন কুয়াশায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে গতকাল ফেরি চলাচল সাময়িক সময় বন্ধ রাখা হয়। বিআইডব্লিটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি চালানো সম্ভব হয়নি। কুয়াশা কেটে গেলে আবার ফেরি চলাচল শুরু হয়। মাঝ পদ্মায় পাঁচটি ফেরি দীর্ঘ সময় আটকা পড়েছিল।
রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ : কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরি বন্ধ থাকার কারণে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন ঢাকামুখী যাত্রীরা। গতকাল সকাল ৮টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রলারে যাত্রী পার করেছে স্থানীয় ট্রলার মালিকরা। জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যেতে হবে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রলার মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছায়। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে দুইশ থেকে তিনশ টাকা দিতে হয়েছে বলে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেন।
কুমিল্লা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কুয়াশায় কমেছে যানবাহনের গতি। মঙ্গলবার থেকে গতকাল সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে কুয়াশা ছিল। দুপুর ১২টার দিকে সূর্যের দেখা মেলে। দুপুর ২টার দিকে আবার সূর্যের আলো কমে আসে। বিকাল থেকে কনকনে শীত অনুভূত হয়। কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা ইসমাইল ভূঁইয়া জানান, উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে। সাভার (ঢাকা) : রাতের প্রথম প্রহরে হঠাৎ করে সাভারে ঘন কুয়াশায় ঝাপসা হয়ে যায় চারদিক। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সড়ক ও মহাসড়কে। ফলে দিনভর সাভারের মহাসড়কগুলোতে সব ধরনের যান চলাচলে ব্যাহত হয়েছে।