শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

উৎসবে মুখর ছিল প্রাঙ্গণ

মোস্তফা মতিহার

উৎসবে মুখর ছিল প্রাঙ্গণ

দিনটি ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর। লাল-সবুজের রঙে রাঙানো ছিল রাজধানী ঢাকা। উৎসবমুখর ছিল গোটা জাতি। সেই ঢেউ-ই আছড়ে পড়েছিল গতকালের অমর একুশে বইমেলায়। লোকে লোকারণ্য ছিল স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। জনতার সেই ঢেউয়ের স্রোত প্রবাহমান ছিল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও।

মেলার প্রবেশদ্বার উন্মোচন করা হয় সকাল ১১টায়। দুপুর পর্যন্ত সুনসান নীরবতা ছিল মেলাজুড়ে। বিকালে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠেন বইপ্রেমীরা। সন্ধ্যার আগেই গোধূলিলগ্নে অন্য এক রূপ নেয় গোট প্রাঙ্গণ। করোনার চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে ভিড় জমান শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব শ্রেণির মানুষ। এ দিনের মেলায় শুধু দর্শনার্থীরাই আসেননি, বইপ্রেমীরাও এসেছেন। হাতে হাতে বই, ব্যাগভর্তি বই স্বাধীনতা দিবসের মেলাকে শুধু সৌন্দর্যের পথেই ধাবিত করেনি, সফলতার দিকেও ধাবিত করেছে। শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ দিন প্রায় সব ধরনের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানেই ছিল বইপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়।

বর্ণমালা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী নুসরাত জাহান মাতৃ খন্দকার বলেন, আগেই জানতাম স্বাধীনতা দিবসে মেলা জমে উঠবে। আমাদের অনুমান সত্যি হয়েছে। তবে যতটা ভেবেছি তার চেয়েও অনেক বেশি মানুষ মেলায় এসেছেন। আর প্রায় সবাই বই কিনেছেন। ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, প্রত্যাশার চেয়েও স্বাধীনতা দিবসে বেশি ভিড় হয়েছে। আমি মনে করি প্রতিটি

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানেই ভালো বিক্রি হয়েছে। এই কয়েক দিন যেসব প্রকাশনা স্টল বিক্রির খরায় ছিল স্বাধীনতার দিনে সেসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের খরাও কেটে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে এবারের বইমেলা বিগত বছরের সফলতার সব রেকর্ড ভঙ্গ করবে।

গতকাল মেলার নবম দিনে নতুন বই এসেছে ২৭৬টি, আর এই পর্যন্ত মোট নতুন বই এসেছে ১ হাজার ৮৪টি।

তাম্রলিপি থেকেই ছড়াবে করোনা : স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বইমেলা আয়োজনের বিষয়ে ডিএমপি থেকে কড়া নির্দেশনা থাকলেও এসবের কোনো তোয়াক্কাই করছে না প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপি। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই প্রকাশনাটির প্যাভিলিয়নে ছিল উপচে পড়া ভিড়। এ সময় একে অপরের শরীরের সঙ্গে লেপটে থেকেই বই কিনেছেন ও তাম্রলিপির লেখকদের অটোগ্রাফ নিয়েছেন। এতে বিরক্ত হয়েছেন মেলায় আগত রুচিশীল পাঠক ও প্রতিভাবান লেখকরা। আয়মান সাদিকসহ তথাকথিত জনপ্রিয় কয়েকজন লেখকের বইয়ের বিক্রি বাড়াতে এই প্রকাশনা সংস্থা কয়েকজন লেখককে তাদের প্যাভিলিয়নে নিয়ে আসে। যার কারণে বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির সামনে ছিল প্রচুর ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা বরং তারাই বইপ্রেমীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। লেখক আয়মান সাদিক তার বইয়ের ওপর অটোগ্রাফ না দিয়ে তরুণ-তরুণীদের হাতের ওপর অটোগ্রাফ দিয়েছেন। বিকালের দিকে এমন দৃশ্যও দেখা গেছে তাম্রলিপির সামনে।

মূলমঞ্চ : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন শাহরিয়ার কবির এবং মোহাম্মদ হান্নান। স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন রূপা চক্রবর্তী ও রফিকুল ইসলাম। সংগীত পরিবেশন করেন মৌটুসী পার্থ, সন্দীপন দাশ এবং তানভীর আলম সজীব। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে এ দিন সকাল ৮টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানস্থ শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলা একাডেমি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর