সোমবার, ৩১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘুমন্ত স্বামীকে হত্যা করে ছয় টুকরা করে স্ত্রী ও প্রেমিক

ক্লুলেস ঘটনার রহস্য উন্মোচন

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে পরকীয়ার কারণে স্ত্রী ও তার প্রেমিককে মারধর করার প্রতিশোধ নিতে ঘুমন্ত সুমন মোল্লাকে (২৮) শ্বাসরোধে হত্যার পর ছয় টুকরা করা হয়। পরে লাশের টুকরা, হত্যায় ব্যবহৃত করাত ও চাপাতি বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয় নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিক। ঘটনায় গ্রেফতার নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিক পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় ৪১ দিন পর রহস্য উন্মোচন করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। গতকাল দুপুরে জিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেফতাররা হলো, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার নারায়ণপুর এলাকার মোসা. আরিফা বেগম (২৪) ও ফরিদপুরের মধুখালী থানার তনয় সরকার (৩১)।

জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার জাকির হাসান জানান, গত ২১ এপ্রিল দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সারদারগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুর পাড় এলাকার জালাল উদ্দিনের বাড়ির পাশের খোলা সেপটিক ট্যাংক থেকে কাঁথা দিয়ে পেঁচানো মাথা ও হাত-পাবিহীন অবস্থায় অজ্ঞাত এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে এসআই মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে কাশিমপুর থানায় মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্তের পর ক্লুলেস এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরিফা বেগম ও তার প্রেমিক তনয় সরকারকে শনিবার ভোরে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে জিএমপি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা খুন করার কথা স্বীকার করে উদ্ধার করা লাশটি আরিফার স্বামী সুমন মোল্লার বলে জানায়। সুমন মোল্লা বাগেরহাটের চিতলমারী থানার গোলা বরননী বাজার এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে। সুমনের স্ত্রী আরিফার সঙ্গে সহকর্মী তনয় সরকারের পরকীয়ার কারণে মারধর করার প্রতিশোধ নিতে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে সারদাগঞ্জের হাজীবাড়ি পুকুরপাড় ময়লার স্তূপ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত এবং সকালে তেতুইবাড়ি এলাকার মোজা তৈরির কারখানার পাশে থাকা ময়লার ভাগাড় থেকে পলিথিনে মোড়ানো সুমনের লাশের মাথা, দুই হাত ও দুই পা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া তনয়ের ঘর থেকে নিহত সুমনের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার দুজনকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের ওই কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, প্রায় দেড় বছর আগে ভালোবেসে আরিফাকে বিয়ে করেন সুমন মোল্লা (২৮)। এটি সুমন মোল্লার তৃতীয় এবং আরিফার দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর এ দম্পতি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জ হাজী মার্কেট এলাকার মাওলানা শফিউল্লাহর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। আরিফা গত চার বছর ধরে স্থানীয় স্কয়ার টেক্সটাইল মিলে চাকরি করেন। একই কারখানায় চাকরি করেন প্রতিবেশী হাজী মতিউর রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া তনয় সরকার। পরিচয়ের সূত্র ধরে দুই সহকর্মী আরিফা ও তনয়ের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ঘটনা জানতে পেরে ভিকটিম সুমন তার স্ত্রী আরিফা ও তনয় সরকারকে কয়েকবার মারধর করেন। এর প্রতিশোধ নিতেই তারা সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনানুযায়ী ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষে স্বামী সুমনকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয় তার স্ত্রী আরিফা। সুমন ঘুমিয়ে পড়লে আরিফা ফোন করে প্রেমিক তনয়কে ডেকে মধ্যরাতে বাসায় আনে। পরে বালিশ চাপা দিয়ে সুমনকে হত্যার পর তার লাশ গুম করার অপেক্ষায় ঘরের ভিতর রেখে দেয়। পরদিন বাজার থেকে করাত কিনে আনে তনয়। রাতে আরিফা ও তনয় করাত দিয়ে সুমনের লাশের মাথা, দুই হাত ও দুই পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছয় টুকরা করে। এ সময় চাপাতি দিয়ে লাশের পেট কেটে দেয় তারা। প্রেস ব্রিফিংকালে জিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারী কমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার, কাশিমপুর থানার ওসি মো. মাহবুবে খোদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর