মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

লাশঘরের ভয়ংকর মানুষ

মির্জা মেহেদী তমাল

লাশঘরের ভয়ংকর মানুষ

বাংলাদেশে ধর্ষণ, হত্যাসহ যেসব ঘটনায় লাশ ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়, সেসব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা এবং প্রোফাইল তৈরি করে থাকে সিআইডি। ময়নাতদন্তের জন্য ১২ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণীর লাশ এসেছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে। প্রত্যেক লাশই আত্মহত্যাজনিত। লাশগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদনে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, ধর্ষণের আলামতও ছিল না। অথচ সিআইডির ল্যাবরেটরিতে ডাক্তারের পাঠানো প্রতিটি লাশের ‘হাই ভেজাইনাল সোয়াবে’ (এইচভিএস) মিলল পুরুষ শুক্রাণু। অবাক করার বিষয় হলো- প্রত্যেকটিতেই একই পুরুষের শুক্রাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়।  এরপরই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে সিআইডি। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে পাঠানো কয়েকটি নমুনা থেকে এ ঘটনা নজরে আসে সিআইডির।

২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম ডিএনএ ল্যাব স্থাপিত হয়। ল্যাব স্থাপনের পর থেকে ধর্ষণ ও হত্যাসহ আদালতের নির্দেশে প্রেরিত সব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা ও প্রোফাইল তৈরি করে সিআইডি।  সিআইডি সূত্র জানায়, তারা কোডিস  সফটওয়্যারে সার্চ দিয়ে দেখেন যে মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানার কয়েকটি ঘটনায় প্রাপ্ত ডিএনএ’র প্রোফাইলের সঙ্গে একই ব্যক্তির ডিএনএ বারবার ম্যাচ করছে। যেটা অনেকটাই অস্বাভাবিক ছিল। তখনই সিআইডির সন্দেহ হয়, কোনো না কোনোভাবে ভিকটিমদের লাশের ওপরে কোনো ব্যক্তির বিকৃত যৌনাচারের ঘটনা ঘটেছে।  বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে সিআইডি। সিআইডি জানতে পারে, সাধারণত ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ওই মর্গে সব লাশই রাখা হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন ডোম নিয়মিত পাহারা দিত। কিন্তু এই লাশগুলোর ক্ষেত্রে একজন ডোম সহকারী নিয়মিত ডিউটিতে থাকত। এতেই সন্দেহ হয় সিআইডির। ওই সহকারী হচ্ছে মুন্না ভক্ত। পরে সিআইডি কৌশলে মুন্নার ডিএনএ সংগ্রহ করে সেটি সংস্থাটির ল্যাবে নিয়ে বিশ্লেষণ করলে ওই পাঁচ তরুণীর লাশের ডিএনএ’র সঙ্গে ম্যাচ করে। তখনই মুন্নার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যায় সিআইডি এবং তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়।

মুন্না ভগত, এক বছরে অন্তত ছয়জন মৃত নারীকে ধর্ষণ করেছে। ছয় নারীর এইচভিএসে (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) মুন্নার ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। লাশগুলো আত্মহত্যাজনিত কারণে মৃত ছিল। ১২ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে তুলনামূলক ভালো লাশ এলেই মুন্না ধর্ষণ করত বলে সিআইডি জানিয়েছে। সিআইডি বলছে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের ডোম সহকারী হিসেবে প্রায় ৪ বছর ধরে কাজ করছে মুন্না। শুরু থেকে মর্গেই থাকে সে। ময়নাতদন্তের আগে লাশ রাতে পাহারা দেওয়ার নামে এই কাজে লিপ্ত হতো সে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর