রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তৃতীয় ধাপের ইউপি ভোটে সতর্কতা

প্রাণহানি ১৮ জেলায়, বেশি সহিংসতা ৩০ জেলায়

গোলাম রাব্বানী

তৃতীয় ধাপের ইউপি ভোটে সতর্কতা

দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত-সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন প্রাণ গেছে সাতজনের। এ ছাড়া নির্বাচন-পরবর্তী সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন আরও পাঁচজন। দ্বিতীয় ধাপের সংঘাতের কারণে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোট নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংঘাতের কারণ বিশ্লেষণে জরুরি বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা নির্বাচনী এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।

এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে রিটার্নিং অফিসার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখারও নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

ইউনিয়ন পরিষদের দুই ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৮ জেলায় ৪০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়া গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটে  বেশি সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৩০ জেলায়। এ ছাড়া ইউপি নির্বাচনে অর্ধশত জেলায় জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার, ইভিএম মেশিন ছিনতাই ও প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনাও ঘটেছে।

দ্বিতীয় ধাপের ভোটের পরের দিন নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় রংপুরে প্রাণ গেছে একজন নির্বাচিত মেম্বারের সমর্থকের। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে বিজয়ী প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম ও পরাজিত প্রার্থী রফিকুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সংঘাতে প্রাণ যায় জয়ী ইউপি সদস্যের সমর্থক আবদুর রহিমের। এ ছাড়া ভোটের পরের দিন গাইবান্ধার সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মো. আবদুর রউফকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানায়, ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে আক্রান্ত হন রউফ। অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা,  নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, মেহেরপুর, গাইবান্ধা, রংপুর, মাগুরা, রাজবাড়ী, কক্সবাজার, কুমিল্লা, রাঙামাটি, বরিশাল, ভোলা, সিলেট, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী ও ফরিদপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় ৪০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এসব জেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস হয়ে উঠেছে। দ্রুত সতর্ক না হলে আরও সহিংসতা ঘটতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে এবার দ্বিতীয়বারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দলের অংশগ্রহণও অনেকটা নামমাত্র। মাঠে বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একাই। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং এ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যেই মূলত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে দলীয় প্রতীক না থাকলেও এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখার লড়াইয়ে রক্ত ঝরাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ইউপি ভোটের সতর্কতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অমরা দ্বিতীয় ধাপের ভোটের বিষয়ে পর্যালোচনা করব। যেখানে মনে হবে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমরা নেব। আমরা বসে সেই বিষয়টি পর্যালোচনা করব। আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ১০০৩ ইউপিতে ভোট হবে। এ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলছে। প্রচারে মুখর হয়ে উঠেছে গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার। প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোট প্রার্থনায় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এ ছাড়া চতুর্থ ধাপে আগামী ২৩ ডিসেম্বর ৮৪০ ইউপিতে ভোট হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ইউপিতেও ভোট শেষ করবে নির্বাচন কমিশন।

সর্বশেষ খবর