রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জটিল রোগ ডেকে আনে ডায়াবেটিস

আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের নারী-পুরুষ এখন এই নীরব ঘাতকে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গে আক্রমণ করে ডেকে আনে জটিল রোগ। তাই সুস্থ থাকতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ পরিস্থিতির মধ্যে ‘ডায়াবেটিস সেবার প্রাপ্যতা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি), বিভিন্ন হাসপাতাল এবং সেবা সংস্থা সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘দেশের মাত্র ১২ ভাগ মানুষের ডায়াবেটিস এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আবার অনেকে টাকার অভাবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে যান না। শহর ও গ্রামের প্রতিটি হাসপাতালে এখন বিনামূল্যে ডায়াবেটিস রোগের অধিকাংশ ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি খুব দ্রুতই ইনসুলিনও বিনামূল্যে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসাব মতে, ২০১৯ সালে প্রতি ১১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের  একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন, যার মোট পরিমাণ ৪২৫ মিলিয়ন। পৃথিবীর মোট ডায়াবেটিস রোগীর ৮৭ শতাংশই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে বাস করছেন। বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্থান শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম। গর্ভাবস্থায় প্রথমবার ডায়াবেটিস ধরা পড়ার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি এবং জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ‘ডায়াবেটিস শরীরের সব অঙ্গপ্রতঙ্গে আক্রমণ করে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। এতে ব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দৃষ্টিশক্তি কমে যায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে যৌন দুর্বলতা দেখা দেয়, কিডনি রোগ হয়, পায়ে পচনশীল ঘা হতে পারে। এই ঘায়ের কারণে পা কেটে ফেলায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় অনেক রোগীকে। ডায়াবেটিস রোগীরা হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। তাই হাঁটতে হবে, মুটিয়ে যাওয়া যাবে না, কোমল পানীয়-ফাস্টফুড খাওয়া বন্ধ করতে হবে, দুশ্চিন্তা করা যাবে না। ডায়াবেটিস যাতে না হয় সেভাবে জীবনযাপন করতে হবে, আর যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি অধ্যাপক এস এম মুস্তফা জামান বলেন, আমরা এক গবেষণায় দেখেছি গবেষণা বলছে ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিসের রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ এ দুটো পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যে বিষয়গুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত, যেমন- অতি ওজন, ধূমপান, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্কিয়তা বা বংশগতি। এগুলো হৃদরোগেরও ঝুঁকি। তাই এ দুটো সমস্যা পরস্পরের হাত ধরেই চলে। একটির ঝুঁকি কমালে অপরটির ঝুঁকিও কমে আসে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডায়াবেটিসের কারণে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ৩৫ বছরের নিচে অনেক তরুণ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের একটি বড় অংশ হার্টঅ্যাটাক হয়ে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত টেরই পান না যে তার কোনো হৃদরোগ আছে। এর কারণ হলো ডায়াবেটিস আমাদের স্নায়বিক অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়। যার ফলে অন্যদের মতো হৃৎপিন্ডে সমস্যা হলে বুকে ব্যথা বা চাপ লাগা, ঘাম অথবা পরিচিত উপসর্গগুলো তাদের প্রায়ই হয় না। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় সাইলেন্ট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা নীরব হার্ট অ্যাটাক। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারলে অনেক জটিল রোগের হাত থেকে মুক্তি মিলবে।

সর্বশেষ খবর