বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নজরদারিতে ১১৮ গার্মেন্ট কারখানা

শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা, বিদেশি অর্ডার নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধের সুপারিশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নজরদারিতে ১১৮ গার্মেন্ট কারখানা

অর্ডার বাতিল ও নতুন ক্রয়াদেশ না আসার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধে সংশয় সৃষ্টি হওয়ায় দেশের ১১৮টি গার্মেন্ট কারখানায় নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে বাণিজ্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোর ওপর নজরদারি বাড়িয়ে সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। গত ১ ডিসেম্বর এ চিঠিটি পাঠানো হয়। ঢাকা মহানগরী ছাড়াও, সাভার-আশুলিয়া, টঙ্গী-গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বমোট ৪ হাজার ৩৪৭টি গার্মেন্ট কারখানার মধ্যে উল্লিখিত ১১৮টি গার্মেন্ট কারখানায় শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা করা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনে। কারণ হিসেবে এসব গার্মেন্টে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গার্মেন্ট শিল্পের কিছু কিছু মালিক করোনাভাইরাসের প্রভাব, ক্রেতা সংকট, আর্থিক সংকট, ক্রয়াদেশ বাতিল, কাজের অর্ডার কম, মূলধন স্বল্পতা, ঋণসহ প্রণোদনা না পাওয়ার অজুহাতে প্রতি মাসে সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারেন না বা করেন না। অনেক ক্ষেত্রে গার্মেন্ট মালিকরা পূর্ব নোটিস ছাড়াই কারখানা বন্ধ করে দেন, ফ্যাক্টরিতে কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো ধরনের নীতিমালা না থাকায় গার্মেন্ট কারখানাগুলো বিদেশি অর্ডার পাওয়ার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করে। কার চেয়ে কে কত কম দামে কাজ করে দিতে পারবে তা নিয়েই শুরু হয় দরকষাকষি। এতে করে একদিকে যেমন ইউনিট প্রতি পণ্যের দাম কম পড়ছে, তেমনি সঠিক সময়ে পণ্য বুঝিয়ে দিতে না পারায় অর্ডার বাতিল করছেন ক্রেতারা। এতে করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনে বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার পাওয়া নিয়ে দেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলোর মধ্যে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে- তা বন্ধে একটি নীতিমালা করার সুপারিশ করা হয়েছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পাঠানো বিশেষ প্রতিবেদনে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ রয়েছে। একইসঙ্গে গার্মেন্ট কারখানাগুলোর তালিকাও রয়েছে। এখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। মন্ত্রণালয় সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে এমন ছোট ছোট কারখানাগুলো নিয়ে বেশি সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে ফেব্রিক্স, সুতাসহ তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি সংকট, বায়ারদের কাছ থেকে অর্ডার কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, শ্রমিকরা যাতে সময়মতো বেতন-ভাতা পায় সে বিষয়ে নজরদারি প্রয়োজন। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে বিষয়েও নজরদারির তাগিদ দিয়েছে।

অসন্তোষ মোকাবিলায় ১০ সুপারিশ : বিদেশি অর্ডার নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছাড়াও কাজের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ও শ্রমিকদের যাতায়াতে সুব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এ ছাড়া যেসব গার্মেন্ট কারখানায় বায়ারদের ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে এবং নতুন ক্রয়াদেশ না আসায় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে- সেদিকে নজরদারি করে দ্রুত সংকট দূর করা; মাসের ১০ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিশ্চিত করা; বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার ও দাম বাড়ানোর বিষয়ে দরকষাকষি করা; বাজার গবেষণার মাধ্যমে নতুন বাজার সৃষ্টি ও পণ্যের বহুমুখীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ; শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধে হঠাৎ করে শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধ না করে শ্রম আইন অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ; গার্মেন্ট সেক্টরে কোনো ধরনের উসকানি বা হস্তক্ষেপ বন্ধে লক্ষ্য রাখা ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ; করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি তদারকি করা এবং কারখানায় অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর ঘটনার আভাস পাওয়া গেলে- প্রশাসন-মালিক-শ্রমিক এই ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

সর্বশেষ খবর