মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভিতরে অরক্ষিত বাইরে ফিটফাট

নেই জীবন রক্ষার সরঞ্জাম-আগুন নেভানোর ব্যবস্থা

রাহাত খান, বরিশাল

ভিতরে অরক্ষিত বাইরে ফিটফাট

চাকচিক্য এবং বিলাসিতায় দেশ-বিদেশে খ্যাতি আছে বরিশাল-ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের লঞ্চের। নজরকাড়া আলোকসজ্জা এবং বাহারি ডেকোরেশন করে যাত্রী আকর্ষণ করা হলেও দুর্ঘটনা রোধে তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেই লঞ্চগুলোতে। জীবন রক্ষাকারী পর্যাপ্ত সরঞ্জাম কিংবা আগুন নেভানোর কার্যকর ব্যবস্থা নেই এসব জলযানে। ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রী বহন পরিণত হয়েছে রেওয়াজে। সাম্প্রতিক সময়ে লঞ্চে চারজন যাত্রী খুনের ঘটনায় নৌ-যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি এখন সর্বাধিক আলোচিত। সনাতন পদ্ধতিতে যাত্রীসেবা দেওয়ার কথা স্বীকার করে এ বিষয়ে যুগোপযোগী আধুনিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন নৌযান মালিকরা। নৌ-যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়ানোর কথা বলেছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের রাজধানী ঢাকা যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। তুলনামূলক  নিরাপদ এবং আরামদায়ক হওয়ায় প্রতিদিন এসব রুটে চলাচল করে লাখো যাত্রী। বরিশাল-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে তুলনা করা হয় জলের মাঝে পাঁচ তারকা হোটেলের সঙ্গে। প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নৌযানগুলোতে রয়েছে রাডার, ইকোসাউন্ডার, জিপিএস এবং ভিএইচএফসহ আধুনিক নেভিগেশন ব্যবস্থা। যাত্রীদের জন্য রয়েছে লিফট, আইসিইউ, স্যুট, ভিআইপি কেবিন, প্রথম শ্রেণির কেবিনসহ আধুনিক অনেক সুবিধা। কিন্তু তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থাই নেই কর্তৃপক্ষের। রাত্রিকালীন ৮ ঘণ্টার এই সার্ভিসে কোনো দুর্বৃত্তায়ন কিংবা হানাহানি হলে নিয়ন্ত্রণের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তাকর্মী। সাম্প্রতিক সময়ের লঞ্চে চার যাত্রী খুনের ঘটনা প্রমাণ করে হাজারো যাত্রী কতটা নিরাপত্তাহীন। মাঝ নদীতে লঞ্চগুলো কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হলে হাজারো যাত্রীর জন্য রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি লাইফ বয়া ও লাইফ জ্যাকেট। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ-তিন গুণ যাত্রী বহন করায় আপৎকালীন প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইফ বয়া ও লাইফ জ্যাকেট না পেয়ে পানিতে ডুবে মারা যান অনেক যাত্রী। বিশাল বিশাল যাত্রীবাহী জাহাজে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা একেবারে সেকেলে। প্রতিটি জাহাজে হাতেগোনা কয়েকটি ফায়ার বাকেট ও স্টিউইঙ্গুসার থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। অনেক জাহাজের বাকেটে বালু নেই। লঞ্চের জন্মের সময় যে ফায়ার স্টিউইঙ্গুসার দেওয়া হয়েছিল সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে শোভা পাচ্ছে ইঞ্জিন রুম এবং কেবিন ব্লকে। আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কল্পনার বাইরে। চাকচিক্যের আড়ালে যাত্রীদের পকেট কাটার নানা কৌশল রয়েছে লঞ্চ মালিকদের। কিন্তু যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষিত তাদের কাছে। এ জন্য জাহাজ মালিক এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডে ৪৪ জন নিহত এবং কয়েক শ মানুষ দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে নৌ-যাত্রীদের মাঝে। নৌ-যাত্রী ডা. রেজোয়ানুল আলম রায়হান বলেন, নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটলে বাঁচার কোনো ব্যবস্থা নেই কোনো লঞ্চে। বিশেষ করে লঞ্চগুলোর অসম প্রতিযোগিতায় মাঝ নদীতে প্রায়ই আঁতকে ওঠেন যাত্রীরা। এগুলো দেখার কেউ নেই। যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তায় সনাতন পদ্ধতি রয়েছে বলে স্বীকার করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন যাত্রী চলাচল সংস্থার (যাপ) নবনির্বাচিত পরিচালক মো. রিয়াজুল কবির। তিনি বলেন, মালিকরা লঞ্চ পরিচালনা করেন না, যাত্রা পথে কর্মীরাই লঞ্চের মালিক। লঞ্চ, শ্রমিক ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় আধুনিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের পাশাপাশি নৌযান শ্রমিকদের দক্ষ করতে সরকারের সহায়তা চান তিনি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের-বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নৌ-যাত্রীদের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা রয়েছে নৌযানগুলোতে। তদারকি বাড়িয়ে নৌ-যাত্রা আরও নিরাপদ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর