‘দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্লোগানে আগামীকাল শুরু হচ্ছে ‘পুলিশ সপ্তাহ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ দিনব্যাপী (২৩-২৭ জানুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন সকাল ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ উদ্বোধন করবেন। পাঁচ দিনব্যাপী এবারের পুলিশ সপ্তাহে ২০২০ এবং ২০২১ সালে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২৩০ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে এলিট ফোর্স র্যাব থেকে পেয়েছেন ৩৫ জন সদস্য। অন্যদিকে, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের ৭২ ঘণ্টার করোনার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া এবারের পুলিশ সপ্তাহে দরবার না হওয়ায় পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের সমন্বয়ে আলাদা একটি মতবিনিময় সভার অনুমতি চাইবে পুলিশ সদর দফতর। গতকাল বিকালে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বার্তায় জানানো হয়, পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি অনুষ্ঠান যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারেডে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট, পতাকাবাহী দলের সুশৃঙ্খল, দৃষ্টিনন্দন প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করবেন। বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন পুলিশ সুপার মো. ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেবেন। করোনার কারণে ২০২১ সালে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ বছর ২০২০ ও ২০২১ সালের পদক একসঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। পুলিশ সপ্তাহকে কেন্দ্র করে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। পুলিশ সপ্তাহকে ঘিরে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হবে। পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে আইজিপির সম্মেলন, শিল্ড প্যারেড, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে পুরস্কার বিতরণ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কর্মরত পুলিশ অফিসারদের পুনর্মিলনী। পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন অধিবেশনের মধ্য দিয়ে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দরবারে উত্থাপিত অনেক দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও দরবার হচ্ছে না। কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন। সেখানে কারও প্রশ্ন করার সুযোগ থাকছে না। তাই গত কয়েক বছরে পুলিশের বিশেষ অর্জন ছাড়াও কিছু বিশেষ দাবি-দাওয়া সরাসরি উপস্থাপনের জন্য পুলিশ সপ্তাহ পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা সময় চাওয়া হবে। সেখানে পুরনো দাবিগুলোর পাশাপাশি এবার নতুন কিছু দাবি উত্থাপন করা হবে পুলিশ সদস্যদের পক্ষ থেকে। সূত্র বলছে, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব একই পদমর্যাদার হওয়ায় পুলিশ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো শুধু আইজিপির মাধ্যমেই নিশ্চিত করার দাবি ওঠানো হবে। এক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে স্বতন্ত্র অধিদফতর করার প্রস্তাব দেওয়া হবে এবারও। থাকবে ‘বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ নিরাপত্তা ও ফৌজদারি বিচার’ নামে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দাবি। মেডিকেল কোর গঠন ও বিদেশি মিশনগুলোতে পুুলিশের পদ সৃষ্টি করার জোর দাবি থাকবে এবারও। একাধিক সূত্র বলছে, সুপার নিউমারারি পদ সংখ্যা বৃদ্ধি, আইজিপির ফোর স্টার পদের মর্যাদা দেওয়া, নতুন আরও ১ লাখ পুলিশ নিয়োগ, সব সদস্যের জন্য বিশেষ ভাতা চালু, পুলিশ মেডিকেল কোর গঠন, উন্নত অস্ত্রসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা, ক্যাডার কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা দেওয়া ও শান্তি ভাতা প্রচলন, গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো, আবাসন সংকট সমাধানের বিষয়গুলোরও প্রস্তাব করা হবে।