সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

মোটরসাইকেল তান্ডবে অতিষ্ঠ নগরবাসী

গতির ঝড়, উঠছে ফুটপাথে, উল্টো পথে গিয়ে যানজট, অপ্রয়োজনীয় হর্ন, বিকট শব্দ, সিগন্যাল অমান্য

শামীম আহমেদ

মোটরসাইকেল তান্ডবে অতিষ্ঠ নগরবাসী

মোটরসাইকেল বা রাইড শেয়ার রাজধানীর গণপরিবহন সংকট থেকে নগরবাসীকে কিছুটা নিস্তার দিলেও বর্তমানে যেন অভিশাপে পরিণত হয়েছে এই দ্বিচক্রযানটি। সড়কে কোনো নিয়ম-কানুনের ধার ধারছেন না বাইকাররা। সামান্য ফাঁক পেলেই মোটরসাইকেলের মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন সড়ক, অলিগলি। বিপরীত লেনে গিয়ে আটকে দিচ্ছেন আসা-যাওয়ার উভয় পথ। ফলে গলিপথগুলোতেও সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। যানজটের মধ্যেও তীব্র হর্নের শব্দে ভারী করে ফেলছেন বাতাস। সুযোগ পেলেই বাইক তুলে দিচ্ছেন ফুটপাথে। কেউ আবার সাইলেন্সারের ধরন বদলে সৃষ্টি করছেন বিকট  শব্দ। বাইকারদের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ পথচারী, সড়কের পাশের দোকানদারসহ অন্যান্য যানবাহনের চালকরা। এমনকি যেসব বাইকার নিয়ম মেনে গাড়ি চালান, তাদেরও অনেক সময় কটুবাক্য শুনতে হচ্ছে।

গলিপথে যানজট ও অসহনীয় হর্নের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ৯টার দিকে নতুন বাজার থেকে হাতিরঝিলে যাওয়ার বাঁশতলা সড়কসহ আশপাশের সবগুলো গলিপথ স্থবির হয়ে পড়ে যানজটে, যার মূল কারণ ছিল  মোটরসাইকেল। ছিল না পথচারীদের হাঁটার জায়গাও। যানজটে এক সড়কেই আটকা পড়ে আটটি স্কুলভ্যান। স্থানীয় কয়েকজন লাঠি হাতে গাড়িগুলোকে শৃঙ্খলায় রেখে যানজট কমানোর চেষ্টা করলেও আটকাতে পারছিলেন না মোটরসাইকেল। ফাঁক পেলেই  মোটরসাইকেলগুলো বিপরীত লেন দিয়ে গিয়ে আটকে দিচ্ছিল আসা-যাওয়ার উভয় লেন। কয়েকজন বাইকারের সঙ্গে অন্য যানবাহনের চালক ও স্থানীয়দের কথা কাটাকাটির ঘটনাও ঘটে। এদিকে যানজটে পুরো সড়ক যখন স্থবির, তখন অনবরত হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছিল  মোটরসাইকেলগুলো। স্কুলভ্যানগুলো আধা কিলোমিটারের কম পথ পাড়ি দিয়ে যখন হাতিরঝিলের সড়কে ওঠে, ঘড়িতে তখন পৌনে ১০টা। যানজটের মধ্যে মোটরসাইকেল চালকদের উদ্দেশে কটুবাক্য ছুড়তে দেখা যায় বিভিন্ন মানুষকে। প্রচ- ক্ষোভ নিয়ে স্কুলভ্যানের চালক রফিকুল বলেন, ‘রাস্তাটা যেন ওদের ..পের। ওই দিক দিয়ে গাড়ি আসতে না পারলে এই দিক দিয়ে যাবে কীভাবে? গত কয়েক দিন আধা ঘণ্টা আগে বের হই। তারপরও বাচ্চাদের সময়মতো স্কুলে নিয়ে যেতে পারি না।’

এদিকে দুপুর আড়াইটার দিকেও ওই সড়কগুলোয় ছিল তীব্র যানজট। ওই এলাকার বায়েজিদ রোডের দোকানদার সেলিম বলেন, মূল সড়কের যানজট এড়াতে পিকআপ, প্রাইভেট কারও এসব গলি দিয়ে ঢুকে পড়ে। এরপর মোটরসাইকেলগুলো দুই লেনই বন্ধ করে দেয়। একবার গাড়ির জটলা লাগলে ৩-৪ ঘণ্টায়ও ফাঁকা হয় না। যানজটের মধ্যে যখন সামনে যাওয়ার সুযোগই নেই, তখনো মোটরসাইকেলগুলো হর্ন বাজাতে থাকে। রাস্তার পাশে দোকানদারি করতে করতে কানেও এখন কম শুনি।

শুধু শাহজাদপুর নয়, রাজধানীর অধিকাংশ অলিগলিতে অফিস ও স্কুল সময়ে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বলছে, মূল সড়কেও হুড়োহুড়ি ও যানজটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হর্ন বাজান মোটরসাইকেল চালকরা। লোকাল বাস ও অন্যান্য ছোট যানবাহনের চেয়ে মোটরসাইকেলের হর্নের শব্দ অনেক তীব্র। ১০-১২টা মোটরসাইকেল এক জায়গায় হলেই হর্নের শব্দে কান ধরে যায়। বাসায় পৌঁছানোর পর মাথাব্যথা করে, মেজাজ খিটখিটে থাকে। এদিকে হাসপাতালের আশপাশকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হলেও চলতি মাসে এক পরীক্ষায় রাজধানীর ১৭টি হাসপাতালের সামনে শব্দদূষণের মাত্রা সর্বনিম্ন ৬৯ দশমিক ৭ ডেসিবল এবং সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৯ ডেসিবল পাওয়া গেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আদর্শ মান অনুযায়ী তীব্রতর শব্দদূষণ।

এদিকে হেলমেট না থাকলে ট্রাফিক পুলিশকে যতটা আইন প্রয়োগে তৎপর দেখা যায়, অযাচিত হর্ন বাজিয়ে শব্দদূষণ ও বেপরোয়া বাইক চালিয়ে অলিগলি বন্ধ করে দেওয়া বাইকারদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। অথচ ২০২০ সালে স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে- সচিবালয় এলাকায় পুলিশের দায়িত্ব পালন করার সময় ৯.৬ ভাগ পুলিশ সদস্যের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। ২৮.৬ ভাগ পুলিশ জানান, অন্যরা উচ্চৈঃস্বরে কথা না বললে তারা শোনেন না। নিজেরাও উচ্চৈঃস্বরে কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর