সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

দুই বছর পর বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চালু

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

দুই বছর পর বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চালু

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ফের সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হলো। গতকাল সকালে ঢাকা-কলকাতার মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। প্রায় একই সময়ে কলকাতার পুরনো চিৎপুরের আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে আসে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন। আগামী বুধবার চালু হবে ঢাকা-জলপাইগুড়ির মধ্যে মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেন। জানা যায়, গতকাল সকাল সোয়া ৮টায় ৪৫৬ আসনের মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১৭০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ ট্রেন চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। তিনি বলেন, এখন থেকে ট্রেনটি সপ্তাহে পাঁচ দিন চলাচল করবে। প্রথম দিনে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীর সংখ্যা ছিল অর্ধেকেরও কম। ১৭০ জন যাত্রীর মধ্যে ভারতের ছিল ১৬ জন এবং ইন্দোনেশিয়ার  একজন। চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুর পৌনে ২টার দিকে মৈত্রী ট্রেনটি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তে পৌঁছায়। এ সময় ভারত ও বাংলাদেশের রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ফুলেল শুভেচ্ছাবিনিময় করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে রাজশাহী বিভাগীয় বাণিজ্যিক রেলওয়ে কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ভারতীয় কলকাতা রেলওয়ের পরিচালক সঞ্জয় কুমারকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ ইঞ্জিনিয়ার এম এম রাজিব বিল্লা, রেলওয়ে পাকশী নিরাপত্তার কমান্ডেন্ট মোরশেদ আলম, দর্শনা রেলওয়ে নিরাপত্তা ইনচার্জ (ওসি) হাসান সাহাবুল, দর্শনা ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) মঞ্জুর আহমেদসহ কর্মকর্তারা। দুপুর ২টার দিকে দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশন থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়। অন্যদিকে, কলকাতা প্রতিনিধি জানান, ভারতীয় সময় সকাল ৭টা ১০ মিনিটে বন্ধন (কলকাতা-খুলনা) এক্সপ্রেস ট্রেনটি কলকাতা স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সবুজ পতাকা নাড়িয়ে এ ট্রেন যাত্রার শুভসূচনা করা হয়। প্রথমদিন মাত্র ১৯ জন যাত্রী নিয়েই রওনা দেয় ট্রেন। ট্রেন ছাড়ার আগে প্রত্যেক যাত্রীর শরীর চেক করা হয়। তাদের মোবাইল, ওয়ালেট, ঘড়ি সবকিছু একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে পুরো শরীর চেক করেন বিএসএফ কর্মকর্তারা। এ সময় অতিরিক্ত মালপত্র বহনের জন্য অতিরিক্ত শুল্ক ধার্য করা হয়। সেক্ষেত্রে কোনো যাত্রীর কাছে ৩৫ কেজি থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত মালামাল থাকলে, প্রতি কেজিতে ২ মার্কিন ডলার অতিরিক্ত ফি দিতে হচ্ছে। এরপর সেখানে তাদের টিকিটে প্রয়োজনীয় সিল মেরে  ইমিগ্রেশন কাউন্টারে পাঠানো হয়। সেখানেও পরীক্ষা করে ট্রেনে প্রবেশ করানো হয়। দীর্ঘ প্রায় ২৬ মাস পর ট্রেন চলছে, স্বভাবতই যাত্রীদের মধ্যেও ছিল উচ্ছ্বাস। টিকিট পেতে তাদের কোনোরকম অসুবিধা হয়নি। সপ্তাহে দুই দিন রবিবার এবং বৃহস্পতিবার এ ট্রেন কলকাতা থেকে খুলনার মধ্যে যাতায়াত করবে।

 বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে সাইরেন বাজিয়ে ১৯ জন যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বন্ধন ট্রেন। ট্রেনটি বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছলে যাত্রী এবং রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রেল কর্তৃপক্ষ। বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনকে বরণ করতে বেনাপোল রেলস্টেশনে হাজির ছিলেন কাস্টমস, ইমিগ্রেশন,  বন্দর এবং রেলওয়ের  কর্মকর্তারা। ট্রেনটি কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেনাপোল ছেড়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেয় ১০টা ৪৫ মিনিটে। ফিরতি ট্রেন খুলনা ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছায় ৩টা ১৫ মিনিটে। বেনাপোল ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেয় ৪টা ১৫ মিনিটে। খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রেলপথে কলকাতা থেকে খুলনার দূরত্ব ১৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে ৯৫ কিলোমিটার ও ভারতে পড়েছে ৭৭ কিলোমিটার। এদিকে গতকাল খুলনায় আগত যাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। বন্ধন এক্সপ্রেস চালু হওয়ায় চিকিৎসা ও ভ্রমণে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে ভোগান্তি কমায় যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমদিনে যাত্রী কম থাকলেও তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে।

সর্বশেষ খবর