চাঁদপুরে মেঘনা নদী থেকে আলোচিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খানকে বালু তোলার অনুমতি দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে সেলিম খানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান। এর আগে গত ৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ। একই সঙ্গে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়। মেঘনা নদীতে (চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে অবস্থিত ২১টি মৌজা এলাকায়) জনস্বার্থে নিজ খরচে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালে রিট করেছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট বালু উত্তোলনের পক্ষে রায় দেয়। রায়ে ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে মেঘনা নদীতে প্রায় ২০০ ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত নির্বিচারে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। এসব বালু সরকারের অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এপ্রিলে চাঁদপুরে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২১ এপ্রিল দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সংস্থাটির সচিব মাহবুব হোসেন। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, অভিযানে কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য উদঘাটন হয়েছে। দুদক সচিব আরও জানিয়েছিলেন, চাঁদপুরে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে কারসাজি এবং মেঘনা-পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছিলেন চাঁদপুর জেলার লক্ষ্মীপুর ইউপির চেয়ারম্যান সেলিম খান। অভিযুক্ত সেলিম খানের বিরুদ্ধে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি মূল্য দেখিয়ে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা ক্ষতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। সেলিম খানের বিরুদ্ধে মেঘনা নদীতে প্রায় ২০০ ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত নির্বিচারে বালু উত্তোলন করে অননুমোদিতভাবে বিক্রি করে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে অগাধ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে দুদক।