সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা

২২ বছর আত্মগোপনে থেকেও রক্ষা হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসলাম শিক্ষায় কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থাকার পরও তিনি গাজীপুরের একটি মসজিদে আট বছর ইমামতি করছিলেন। এর আগে নাম-পরিচয় গোপন রেখে উত্তরায় ছদ্মনামে হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্র খুলেছিলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, গাজীপুরে একটি হোমিওপ্যাথি কলেজে প্রভাষক হিসেবেও চাকরি করেছেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক এনামুল হক (৫৩)। তবে এবার  আর শেষরক্ষা হয়নি। র‌্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১-এর একটি দল শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে ২২ বছর আত্মগোপনে থাকা সেই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, এনামুলের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরিচয় গোপন করে কারি না হওয়া সত্ত্বেও কারি পরিচয় দিয়ে গাজীপুরের একটি মসজিদে আট বছরের বেশি সময় ইমামতি করেন। ভুয়া ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে গাজীপুরে একটি হোমিওপ্যাথি কলেজে দুই বছর প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এনামুল নিজেকে গাজীপুর হোমিও কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করতেন। পরে ২০১০ সালে তিনি ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে বসবাস করতে থাকেন। উত্তরায় ২০১৫ সালে ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামে একটি ভুয়া হোমিও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২০ সালে ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামের প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে ক্যান্সার নিরাময় কেন্দ্র নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে ক্যান্সারের ভুয়া হারবাল চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। তার চিকিৎসায় ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় এবং একই সঙ্গে এইডস রোগ নিরাময়েও তার ওষুধ সক্ষম বলে দাবি করতেন এনামুল। এনামুলের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হুজির আমির মুফতি আবদুল হান্নানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তিনি ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ শহরে বিসিক শিল্পনগরীতে মুফতি হান্নানের ছোট ভাই আনিসের সঙ্গে যৌথভাবে প্লট বরাদ্দ নিয়ে ‘সোনার বাংলা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে টুথপেস্ট, টুথ পাউডার, মোমবাতি ও সাবান তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। মুফতি হান্নান ও অন্য জঙ্গি নেতারা ২০০০ সালের জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার তার কারখানা পরিদর্শন করেন। এনামুল বিভিন্ন সময় মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক ও সমাবেশে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য তারা ওই কারখানায় সাবান তৈরির কেমিক্যাল সংগ্রহের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম জমা করে লোহার ড্রামের ভিতর দুটি শক্তিশালী বোমা তৈরি করেন। পরে কোটালীপাড়ায় জনসভার অদূরে বোমা পুঁতে রাখেন তারা।

র‌্যাব জানায়, র‌্যাবের জঙ্গি সেল বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার নানা মামলা পর্যালোচনা করে থাকে। এই পর্যালোচনার মাধ্যমে পলাতক জঙ্গিদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করছে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল ও রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক জঙ্গি মুফতি শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর আগে কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজি-বির প্রতিষ্ঠাতা আমির মুফতি আবদুল হাইকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজের প্রাঙ্গণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় জঙ্গি শেখ মো. এনামুল করিমসহ অপরাপর জঙ্গি সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখেন। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা রুজু হয়। তদন্ত শেষে ওইসব মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ রায়ে শেখ মো. এনামুল হকসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন আদালত।

সর্বশেষ খবর