মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভাগ্য বদলাচ্ছে নোনাজলের গোলপাতায়

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

ভাগ্য বদলাচ্ছে নোনাজলের গোলপাতায়

নামে গোল গাছ হলেও দেখতে আসলে গোল নয়। কিছুটা নারকেলপাতার মতো। প্রতিটি গোল গাছ পাতাসহ উচ্চতা হয় ১২ থেকে ১৫ ফুট। এর ফুল হলুদ ও লাল বর্ণের। ফুল থেকে ফল (গাবনা) পরিপক্ব হলে সেটি তাল গাছের আঁটির মতো কেটে শাঁস খাওয়া যায়। এটি প্রকৃতিনির্ভর পাম জাতীয় উদ্ভিদ। নোনাজলে এর জন্ম, নোনা সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অথচ এর ডগা থেকে বেরিয়ে আসে সুমিষ্ট রস। সেই রস দিয়ে তৈরি হয় গুড়। সুস্বাদু এ গুড়ের চাহিদাও ব্যাপক। এসব গাছ পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদী কিংবা খালের পাড়ে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাব, প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ আর চাষাবাদের অভাবে এ গাছ ক্রমেই ধ্বংস হতে বসেছে বলে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় গোল গাছের মালিকরা জানান, গোল গাছ চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক, সহজসাধ্য এবং ব্যয়ও খুব কম। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। করতে হয় না কোনো পরিচর্যা। একসময় খাল-বিল-নদীর তীরে প্রচুর গোলের বাগান দেখা যেত। কিন্তু আগের মতো নেই সেই গোলবাগান। শীত মৌসুমে গোলবাগানের মালিকরা এর রস দিয়ে গুড় উৎপাদন করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করেন। জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল সুন্দরবনসহ দক্ষিণ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে গোল গাছ রয়েছে। বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কুয়াকাটা, রাঙাবালি, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, বরগুনার আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, ভোলা ও খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকায় গোল গাছের বাগান রয়েছে। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন এ উপজেলায় ব্যাপক গোলবাগান রয়েছে। বন বিভাগের উদ্যোগে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এলাকায় গোলবাগান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গোলবাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামে সরেজমিন দেখা যায়, সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক রস সংগ্রহ করতে ছুটে যান গোলবাগানে। কেউ কলস কিংবা বালতি নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ রসভর্তি কলস-বালতি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। সংগৃহীত গোলের রস বাড়ির উঠানে গৃহবধূরা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ছেঁকে ডোঙায় রাখছেন। এরপর আগুন জ্বালিয়ে রস দিয়ে তৈরি করেন গুড়। ওই গ্রামের সুনিতা রানী বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে গোলের রস দিয়ে গুড় তৈরি করছি। আগে অনেক বেশি গুড় হতো। এখন কমে গেছে।’ নিঠুর হাওলাদার জানান, তাঁর বাগানে ৩ শতাধিক গোলের ছড়া হয়েছে। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কলস নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাগানে। শুরু হয় প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ। এভাবেই প্রতিদিন দুই দফা রস সংগ্রহ ও ছড়া কাটতে হয় তার। চৈত্র পর্যন্ত চলবে এ কর্মযজ্ঞ। বন বিভাগের কলাপাড়ার সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর কাদের বলেন, ‘বন বিভাগের উদ্যোগে এ উপজেলার চাকামইয়া, নীলগঞ্জ ও টিয়াখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গোল গাছের বীজ বপন করা হয়েছে। সেগুলো ভালোই হয়েছে। এ বছর আরও গোল গাছের বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর