মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অবশেষে স্বস্তি, মিলবে বাড়তি বিদ্যুৎ

রামপাল ও পায়রার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে মার্চে যুক্ত হবে আদানির

জিন্নাতুন নূর

দীর্ঘদিন ধরে অলস বসে থাকার পর অবশেষে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ। আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ফলে সহজেই এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। একই সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হওয়ায় রামপাল কেন্দ্রের বিদ্যুৎ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও তা এখন কেটে গেছে। এরই মধ্যে গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়েছে রামপাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ। আগামী বছরের শুরুতেই ভারতের ঝাড়খন্ডের আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আরও ৮০০ মেগাওয়াট সরবরাহ শুরু হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছেন, আশা করা যায় আসছে গ্রীষ্ম ও রোজায় বিদ্যুতের যে চ্যালেঞ্জ তা মোকাবিলায় এই বাড়তি বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কয়েক দিন ধরে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে এখনো কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেনি। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাঈদ আকরাম উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিস্টেমে চাহিদা কম থাকায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) কর্তৃপক্ষ আমাদের থেকে কম বিদ্যুৎ নিচ্ছে। রবিবার ১২ ঘণ্টা ফুল লোড নিয়েছে। তবে গতকাল ভোর ৬টার পর লোড আবার কমিয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের ফুল লোড নেওয়ার জন্য জানিয়েছি। গতকাল সকালে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াট লোড সরবরাহ করা হয়েছিল। আমরা প্রথম ইউনিটের পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত। এর আগে ২৩০ কেভি লাইনে পুরো বিদ্যুৎ দেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন চালু হওয়ায় এখন আর সমস্যা নেই। পিজিসিবি তার সক্ষমতা অনুযায়ী ফুল লোড নিলে তখন বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। আশা করছি আগামী বছরের জুনে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরু হবে।’ প্রসঙ্গত, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিআইএফপিসিএল। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণাধীন কেন্দ্রটির প্রতি ইউনিটের উৎপাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর জুনে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরুর কথা। একইভাবে পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত টাওয়ারের মাধ্যমে সংযোগ হয়েছে ঢাকার আমিনবাজার সাবস্টেশনের। এতে এখান থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ। পায়রায় উৎপাদিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বাকি বিদ্যুৎ যাবে বরিশাল ও খুলনার আঞ্চলিক লাইনে। চলতি বছর ৩ মার্চ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের ৯ মাস পর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে এখন শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, পুরো দেশ এই বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করবে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রামপাল কেন্দ্রটি এখন ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ফলে এখন এই বিদ্যুৎ দেশের অন্যত্র সরবরাহে আর বাধা নেই। চাহিদা অনুযায়ী এখন কেন্দ্রটির পুরো বিদ্যুৎই কাজে লাগানো সম্ভব। আবার লিস্ট কস্ট জেনারেশন হিসেবে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পুরো বিদ্যুৎ এখন ব্যবহার করা যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে রামপালে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। প্রথম ইউনিটটি এর সক্ষমতা অনুযায়ী ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে। আমিনবাজার সঞ্চালন লাইনের কারণে ধীরে ধীরে এটি ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। কয়েক দিন পরীক্ষামূলক চালানোর পর যখন দেখব যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এর সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে, তখনই কেন্দ্রটির বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের ঘোষণা দেওয়া হবে। সাধারণত টানা সাত দিন এই ট্রায়াল রান চলে। এর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা না দিলে তখন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা শেষে এর বাণিজ্যিক উৎপাদনের ঘোষণা দেবে। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম দিকে ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি থেকে প্রথমে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে। আশা করছি প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না। পাশাপাশি বরিশালের আরেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ। এর টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজ চলছে। এই কেন্দ্রটি থেকেও দ্রুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আগে আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় পশ্চিমাঞ্চল থেকে সামর্থ্যরে চেয়ে কম বিদ্যুৎ আনতে পারতাম। অথচ পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুতের গুরুত্ব বেশি। এখন সেই বাধা দূর হয়েছে। এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার প্রভাব সামগ্রিকভাবে অনেক বেশি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর