শিরোনাম
শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপন্ন জলের পাখি ‘ডাহুক’

সাইফুল ইসলাম বেগ, বিশ্বনাথ (সিলেট)

বিপন্ন জলের পাখি ‘ডাহুক’

গ্রামাঞ্চলে এক সময় ছিল ডাহুক পাখির অবাধ বিচরণ। সকাল-সন্ধ্যা কিংবা মধ্যরাতে ভেসে আসত ডাহুকের ‘কোয়াক-কোয়াক’ সুর। বাড়ির পুকুর, ডোবা-নালার কচুরিপানায়, ঝোপ-ঝাড় আর বেতবনে ছোটাছুটি করত ওরা। ঘুরে বেড়াত দলবেঁধে। তবে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না পরিবেশবান্ধব এ পাখির আনাগোনা। আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্য সংকট, শিকারিদের উৎপাতসহ নানা কারণে প্রকৃতি থেকে নীরবে সুন্দর এ পাখির সংখ্যা  কমে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রাণী বিশারদরা। পাখি পরিচিতিতে দেখা যায়, ডাহুকের বৈজ্ঞানিক নাম : Amaurornis phoenicurus, GwU Rallidae (রেলিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত Amaurornis (আমুরর্নিস) গণের অন্তর্গত মাঝারি আকৃতির পাখি।  বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ লাললেজী কালো পাখি। এদের ‘ডাইক’, ‘পান পায়রা’ ‘ধলাবুক ডাহুক’সহ আরও বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়। মাঝারি আকৃতির এ পাখি দেখতে খুবই নান্দনিক। ডাহুক খুব চঞ্চল প্রকৃতির পাখি। ছোট লেজ দ্রুত নাচিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটতে পারে ওরা। লেজের নিচের অংশে রয়েছে লালচে আভা। বিপদ আঁচ করতে পারলে পলকেই  ঝোপের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে রয়। লম্বায় ৩২-৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে প্রায়। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। পা সরু ও লম্বা লম্বা পায়ের নখ। পিঠ ধূসর আর খয়েরি-কালো। মাথা, মুখ, গলা, বুক আর পেট ধবধবে সাদা। ঠোঁট হলুদ রঙের। ঠোঁটে আছে লাল রঙের কিঞ্চিৎ দাগ। ডাহুকের প্রিয় খাদ্য কীটপতঙ্গ আর জলজ পোকামাকড়। এ ছাড়া শেওলা, ধান, শামুক, কেঁচো, জোঁক, ছোট মাছ খেয়ে থাকে। এরা বাসা বাঁধে জলাধার, ঝোপ কিংবা বাঁশঝাড়ে। তবে পানিই এদের প্রকৃত আবাসস্থল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজনন সময়। এরা ছয়-সাতটি ডিম দেয়। স্ত্রী-পুরুষ পাখি উভয়েই তা দেয় ডিমে। ডিম ফোটে ১৮ থেকে ২০ দিনে। উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের পাখিপ্রেমী মাসুম আহমদ জানান, বাড়ির পাশের ডোবা কিংবা ঝোপে আগে হরহামেশা ডাহুক পাখির দেখা মিলত। সন্ধ্যা-রাতে ডাহুকের কী ডাক। এখন ‘কালে-ভদ্রে’ও সুন্দর এ পাখি চোখে পড়ে না।  ডাহুক পাখি কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে, ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন’-এর গবেষণা কর্মকর্তা শিহাব খালেদীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডাহুক একটি উপকারী পাখি। এগুলো কমে যাওয়ার পেছনে মূল কারণই হচ্ছে উপযুক্ত আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়া। এ কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডাহুকের বিচরণ ও প্রজনন। দায়ী জলজ পরিবেশ দূষণও। পাশাপাশি শিকারও একটি বড় হুমকির কারণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর