রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই দলেই প্রার্থী জট

যশোরের নির্বাচনী হালচাল

সাইফুল ইসলাম, যশোর

দুই দলেই প্রার্থী জট

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোরে দলীয় অবস্থান শক্তিশালী করতে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। জেলার বেশির ভাগ স্থানে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি স্থানগুলোতে পুনর্গঠনের কাজ চলছে।

চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার এবং সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যশোরে তৃণমূল পর্যায় ঢেলে সাজাতে ব্যস্ত বিএনপিও। প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো পুনর্গঠন করছে দলটি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ডের মধ্যেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ ও শোডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ২৪ নভেম্বর যশোরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। ছয় আসনের প্রায় প্রত্যেকটিতেই প্রধান দুই দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা প্রার্থিতার দৌড়ে রয়েছেন। দুই দলেই প্রার্থী জট আছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

যশোর জেলায় সংসদীয় আসন ছয়টি। সবগুলো আসনই আওয়ামী লীগের দখলে। আগামী নির্বাচনেও যশোরের সবগুলো আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা যাকে যেখানে মনোনয়ন দেবেন, তা সবাই বিনাপ্রশ্নে মেনে নেবেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, আপাতত নির্বাচনের চেয়ে তারা সরকার পতনের আন্দোলনকে জোরদার করতে দল গোছানোর দিকে মনোনিবেশ করেছেন। খুব শিগগিরই জেলা কমিটির সম্মেলন হবে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যশোরের ছয় আসনেই বিএনপি প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হবে বলে তিনি মনে করেন। যশোর-১ (শার্শা উপজেলা) : এ আসনে ২০০৮ সাল থেকে টানা সংসদ সদস্য আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শিল্পপতি শেখ আফিল উদ্দিন। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে তার পাশাপাশি বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটনও এবার মনোনয়ন চাইবেন। শেখ আফিল উদ্দিনের পাশাপাশি আশরাফুল আলম লিটনও শার্শা আওয়ামী লীগে শক্ত ভীত তৈরি করে ফেলেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এখানে তাঁর অনেক কর্মী-সমর্থক আছে। তবে একসময় সংস্কারপন্থি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তাকে নিয়ে দলের মধ্যে অনেক বিতর্কও আছে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু ও যুগ্ম আহ্বায়ক-১ হাসান জহির গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও তারা দলের কাছে মনোনয়ন চাইতে পারেন।

যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলা) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) মো. নাসির উদ্দীন। তিনি এবারও মনোনয়ন চাইবেন। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আহসানুল হক এ আসনে একজন শক্তিশালী প্রার্থী। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মো. মনিরুল ইসলামও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন চাইবেন সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং তার ছেলে আওয়ামী লীগের যশোর জেলা কমিটির সদস্য মোস্তফা আশীষ ইসলাম। তারা দুজনেই নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। গতবার এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলী রায়হানসহ আরও কয়েকজন। এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবিরা ইসলাম ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের মধ্যে। চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলামও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। যশোর-৩ (সদর উপজেলা) : যশোরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি কাজী নাবিল আহমেদ। একসময় এ আসনে নির্বাচন করতেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের খালেদুর রহমান টিটো ও আলী রেজা রাজুর মতো নেতারা। এ তিন বাল্যবন্ধুর কেউই আর বেঁচে নেই। এ আসনে গতবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজী নাবিল আহমেদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজী নাবিল আহমেদ মনোনয়ন পান। পরবর্তীতে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে শাহীন চাকলাদার সংসদ সদস্য হন। এবারও শাহীন চাকলাদার যশোর-৬ আসন থেকেই নির্বাচন করতে আগ্রহী। যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা এবং সদর উপজেলার একাংশ) : অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের দিক থেকে এ আসনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নওয়াপাড়া শিল্পনগর ও নওয়াপাড়া নৌবন্দর এ আসনের মধ্যে। ২০০৮ সাল থেকে এ আসনে সংসদ সদস্য বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিত কুমার রায়। তবে দলের মধ্যেই এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক বিপুল ফারাজী ইতোমধ্যেই এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝেও তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে আরও যারা গণসংযোগ করে চলেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর, ডাক্তার নিকুঞ্জ বিহারী রায়, বাঘারপাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার অধিকারী। বিএনপি থেকেও বেশ কয়েকজন নেতা দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন। বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইউব দলের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে বেশ এগিয়ে আছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। যশোর-৫ (মণিরামপুর উপজেলা) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। এবারও তিনি এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। গতবার এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তার ভাই আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পীযূষকান্তি ভট্টাচার্য। এবারও তিনি মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে থাকবেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে এলাকায় গণসংযোগ করছেন কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল হাসান বারী, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল মজিদ, মণিরামপুর পৌরসভার মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান ও ব্যবসায়ী এস এম ইয়াকুব আলী। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে থাকবেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র শহীদ ইকবাল হোসেন, যশোর নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মুসা ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইফতেখার সেলিম অগ্নি। যশোর-৬ (কেশবপুর উপজেলা) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তিনি আবারও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। তার পাশাপাশি এ আসনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন। সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এ এস এইচ কে সাদেক ও ইসমাত আরা সাদেকের কন্যা নওরীন সাদেকও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল হোসেন আজাদ। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত সংযোগ রেখে চলেছেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সামাদ বিশ্বাস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর