সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোজায় এলসি ছাড়াই পণ্য আমদানি

১২ মিলিয়ন ডলারের গম আনতে চায় এমআর ট্রেডিং - ৫ মিলিয়ন ডলারের চিনি আমদানি করবে আরএইচ ট্রেডিং

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রোজা সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে এলসি ছাড়াই পণ্য আমদানি করতে চাইছে একাধিক ট্রেডিং কোম্পানি। এমআর ট্রেডিং নামে একটি কোম্পানি এলসি ছাড়া ৩০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করতে চাইছে, যাতে খরচ হবে ১২ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া আরএইচ ট্রেডিং নামে একটি কোম্পানি ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে। তবে এ ধরনের প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি থাকায় আবেদনগুলো সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলোতে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। এমনকি আমদানি পণ্য বন্দরে আসার পর এলসি নিষ্পত্তি না হওয়ায় সেই পণ্য জাহাজ থেকে আনলোড করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। এ প্রেক্ষিতে গত মাসে দ্রব্যমূল্যসংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছিলেন, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে প্রয়োজনে এলসি ছাড়াই পণ্য আমদানির সুবিধা দেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় ছোট ছোট পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে ওই সভায় তিনি জানিয়েছিলেন। সূত্র জানায়, বাণিজ্য সচিবের ওই বক্তব্যের পর একাধিক

 কোম্পানি এলসি ছাড়া পণ্য আমদানির সুযোগ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। এর মধ্যে গম আনার জন্য আবেদিত কোম্পানি এমআর ট্রেডিং দেশবন্ধু গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি আবেদনে জানিয়েছে, দুবাইভিত্তিক আল কাইরুয়ান জেসারেল ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গম আমদানি করবে। এক্ষেত্রে তারা ৯০ দিনের বিলম্বে মূল্য পরিশোধের (ডেফার্ড পেমেন্ট) সুবিধায় ঋণপত্রের মাধ্যমে এবং ঋণপত্র ছাড়া উভয় প্রক্রিয়ায় ১২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের গম আনতে চায়। এ ছাড়া আরএইচ ট্রেডিং কোম্পানিটি বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। এ কোম্পানিটি নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাকি চিনি বাজারে সরবরাহ করবে এই শর্তে এলসি ছাড়া পণ্য আমদানির সুযোগ চেয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশে ঋণপত্র না খুলে থার্ড পার্টির মাধ্যমে হংকং-এর একটি ব্যাংকে এলসি করে পণ্য আমদানি করবে। এক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানটি এলসি করবে সেটিও দুবাইয়ের। আমদানিকৃত চিনি দেশের বাজারে বিক্রি করে বিক্রয়কৃত অর্থ নোটিফাই ব্যাংকে এলসি করা দুবাইয়ের কোম্পানিটির অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হবে। 

সূত্র জানায়, রোজভ্যালি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ডেফার্ড পেমেন্ট (বিলম্বিত মূল্য পরিশোধ)-এ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চিনি দিতে চাইছে টিসিবিকে। তবে রোজভ্যালি আবেদনে জানিয়েছে, তারা এলসির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করলেও বিলম্বিত মূল্য পরিশোধ প্রক্রিয়ায় টিসিবিতে চিনি সরবরাহ করতে চায়। ব্রাজিল থেকে পরিশোধিত চিনি আমদানি করে তার সব ধরনের ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধের পরও প্রতি মেট্রিক টন চিনি ৯২ হাজার টাকা দরে (চট্টগ্রাম বন্দর থেকে) দিতে পারবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনে জানিয়েছে ট্রেডিং কোম্পানিটি। বিষয়টি জানার জন্য গতকাল আরএইচ ট্রেডিংয়ের আদেনপত্রে দেওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখা যায়, উল্লেখিত নম্বরটি ভুল (১২ ডিজিটের)। এ ছাড়া রোজভ্যালির উল্লেখিত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।  এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে গেলে প্রচলিত প্রক্রিয়ার (এলসি) বাইরে কিছু পণ্য আমদানি করা যায়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা জরুরি প্রয়োজনে মিয়ানমার ও ভারত থেকে কিছু নিত্যপণ্য ছোট পরিসরে আমদানি করে থাকেন। এক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থে কখনো কখনো সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গ্যারান্টার হতে পারে। তাছাড়া লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপেও এখন সেলস কন্ট্রাক্ট বা স্ট্যান্ডবাই এলসিতে পণ্য আমদানির সুযোগ নিচ্ছে কেউ কেউ। তবে বড় পরিসরে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি করার বিকল্প নেই। কারণ মিলিয়ন ডলারের পণ্য এলসি ছাড়া আমদানি করতে গেলে তাতে শুধু বাণিজ্যিক ঝুঁকি নয়, ডলার পাচারের সুযোগ বেড়ে যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর