শিরোনাম
সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
মতবিনিময় সভায় বক্তারা

দেশের অর্থনীতি বদলে দেবে পায়রা বন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের শুরুতেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে গভীর চ্যানেলসংবলিত পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল। ১০ দশমিক ৫ মিটার গভীর চ্যানেলের কারণে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন পণ্য নিয়ে ২০০ মিটার দীর্ঘ প্যানামেক্স জাহাজ অনায়াসেই ভিড়তে পারবে এ বন্দরে। ঢাকা থেকে কম দূরত্বের কারণে বাঁচবে পণ্য পরিবহন ব্যয়। সারা দেশের সঙ্গে সহজ নৌ ও সড়ক যোগাযোগ এবং ভারত-নেপাল-ভুটান থেকে সবচেয়ে কাছের বন্দর হওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বড় ভূমিকা রাখবে এ বন্দর। গতকাল পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও অংশীজনের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের সভাপতিত্বে রাজধানীর মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পায়রাবন্দরের সদস্য (হারবার অ্য্ন্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দরের তুলনায় পায়রাবন্দরের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরেন হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন এস এম শরীফুর রহমান। বন্দরের চ্যানেলের নাব্য ও ড্রেজিং কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মাহমুদুল হাসান খান। পরিচালক (ট্রাফিক) মো. আতিকুল ইসলাম বন্দরের ব্যবসায়িক গুরুত্ব তুলে ধরেন। পায়রাবন্দরের সচিব সোহরাব হোসেন বন্দরকেন্দ্রিক নানা উন্নয়ন ও পটুয়াখালীকে পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলাসহ সরকারের নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেন। বন্দরের কাস্টমস কার্যক্রম নিয়ে পরিকল্পনা তুলে ধরেন খুলনা কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার মো. মাজেদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, শিপার্স কাউন্সিল অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বন্দরের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। তারা বন্দর নাব্য সংকট, কাস্টমস জটিলতা, অনলাইন কার্যক্রমে গতিহীনতার প্রসঙ্গ তুলে সব স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে পরামর্শ করে সেগুলো সমাধানের দাবি তোলেন। বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণে বন্দরের নানা সুযোগ-সুবিধা ওয়েবসাইটে নিয়মিত হালনাগাদ করার পরামর্শ দেন তারা।

ব্যবসায়ীদের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, পায়রাবন্দর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন থেকে এসেছে। এটি হবে দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য বদলের দ্বার। আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে পায়রাবন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীরতম চ্যানেল। ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রায় শেষ। আশা করছি, আগামী ১৫ মার্চ ৩৫ হাজার মেট্রিকটন মাল নিয়ে পায়রাবন্দরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জাহাজ ঢুকবে। আগামী মাসে ২০০ থেকে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ প্রতিদিন আসবে এ বন্দরে। এ বন্দর হয়ে নদীপথেই সরাসরি ঢাকা, উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশে পণ্য চলে যাবে। এমনকি ভারত, নেপাল ও ভুটানের সবচেয়ে কাছে পায়রাবন্দর। পায়রাবন্দরে কখনো নাব্য সংকট হবে না। এজন্য বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং করবে, আমরাও করব। এ ছাড়া রাবনাবাদ চ্যানেলটি প্রাকৃতিকভাবে নাব্য ধরে রাখে। তিনি বলেন, পায়রা হবে সম্পূর্ণ স্মার্ট গভীরতম একটি বন্দর। আমরা পুরোপুরি অটোমেশনে যাচ্ছি। ঢাকার সবচেয়ে কাছে হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ায় খরচ কমবে।

চ্যানেলের নাব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চ্যানেলের গভীরতা হবে ১০ দশমিক ৫ মিটার। জোয়ারে ১২ থেকে ১৩ মিটার হবে। পাঁচ থেকে সাত বছর পর দ্বিতীয় ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। তখন চ্যানেলের গভীরতা হবে ১৬ থেকে ১৭ মিটার। চট্টগ্রাম বন্দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন মাল নিয়ে কোনো প্যানামেক্স জাহাজ ঢুকতে পেরেছে বলে মনে হয় না। পায়রাবন্দরে আগামী মাস থেকে সেটা পারবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা অনেক বড় ব্যাপার। পায়রাবন্দরে বিনিয়োগ করার জন্য বিভিন্ন দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি। পায়রাবন্দরের চ্যানেলটি চওড়াই পাঁচ কিলোমিটারের বেশি। সরাসরি জাহাজ ঢুকে যাবে ইনার অ্যাংকারেজে। ইনার অ্যাংকারেজে ১০-১৫টি বড় জাহাজ সব সময় রাখতে পারবে। জেটির পাশের গভীরতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। জেটির পাশে ১৭-২০ মিটার পর্যন্ত গভীরতা আছে। জাহাজ নিয়ে সোজা জেটিতে ভেড়াতে পারবেন। এটা একমাত্র বন্দর যেখানে ডেঞ্জার কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। পায়রাবন্দর শুধু দক্ষিণাঞ্চল বা বাংলাদেশ নয়, এ অঞ্চলের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হয়ে দাঁড়াবে। গত বছর ১ হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি জাহাজ আমরা হ্যান্ডেল করেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর