শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিস্তাপাড়ে মানুষের কপালে চিন্তার ছাপ

পশ্চিমবঙ্গে নতুন খাল খনন প্রকল্প

নজরুল মৃধা, রংপুর

তিস্তাপাড়ে মানুষের কপালে চিন্তার ছাপ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ বিভাগ তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খনন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া উজানে একাধিক নতুন ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করায় তিস্তা পাড়ের মানুষের কপালে চিন্তার ছাপ দেখা দিয়েছে। তাদের মাঝে দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। এমনিতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রংপুর অঞ্চলের মানুষ। প্রকৃতিতে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। শুকনো মৌসুমে একটু পানির জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে তিস্তার দুই পাড়ের মানুষ। আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষ এ জন্য যে, ভারত হয়তো তিস্তা পাড়ের মানুষের কান্না শুনে শুকনো মৌসুমে পানির ন্যায্য হিস্যা দেবে। কিন্তু কিছুই হলো না। সঠিক পরিচর্যার অভাবে তিস্তা মরতে বসেছে। এ অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন খাল খনন ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে এ অঞ্চল দ্রুত মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাবে। নদী নিয়ে কাজ করেন এ ধরনের একাধিক ব্যক্তি বলেন, তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী। এই নদীতে কিছু করতে হলে আন্তর্জাতিক আইন মেনে করা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো আইন মানা হচ্ছে না। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনাও মানছে না। বাংলাদেশের কথা কেউ চিন্তা করছে না। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা মিজানুর রহমান, আবদুল্লাহ হাদিসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, এমনি শুকনো মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না। এর ওপর ভারত বাঁধ দিলে তিস্তা নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। নদীবিষয়ক গবেষক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে খাল খনন করছে। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অশনিসংকেত।

জানা গেছে, ডালিয়ায় তিস্তা নদীর পানি সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর দুই দেশের এই প্রকল্প আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ অঞ্চলে প্রথম সম্ভাবনা যাচাই সমীক্ষা হয় ১৯৬০ সালে। দ্বিতীয় সমীক্ষা প্রতিবেদন ১৯৬৯-৭০ সময়কালে সমাপ্ত হয়। পাকিস্তান আমলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিকল্পনা স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এই প্রকল্পের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিকে সেচ চাষের আওতায় আনার সিন্ধান্ত নেওয়া হলেও পানিপ্রবাহ ঠিক না থাকায় প্রতিটি মৌসুমে পানি নিয়ে হাহাকার ওঠে। ডালিয়া পয়েন্টের উজানে ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করার কারণে সব সময় এ প্রকল্পে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে যথেষ্ট পানি সরবরাহ নিশ্চিত হলে এ প্রকল্পের এখনো বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার একটি উপনদী তিস্তা। উত্তর সিকিমের পার্বত্য অঞ্চলে এ নদীর উৎপত্তি। লাচেন ও লাংচু নামের দুই পর্বত স্রোতধারাই তিস্তার মূল উৎস। এ দুই স্রোতধারা সিকিমের চুংথাংয়ে এসে মিলেছে। চুংথাংয়ে ভাটিতে তিস্তা আস্তে আস্তে প্রশস্ত হতে থাকে। সিংতামে এর প্রশস্ততা ৪৩ মিটার। চুংথাং ও সিংতামের বহু পর্বতের স্রোত তিস্তাকে সমৃদ্ধ করেছে। এগুলোর মধ্যে রাংনিচু, ডিকচু, তালাংচু, চাকুংচু। রাংনিচু একটি বড় উপনদী। তিস্তার সঙ্গে এটি সিতামে গিয়ে মিলেছে। অন্য তিনটি গিয়ে মিলেছে গ্যাংটকের কাছে। এভাবেই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে তিস্তা ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার সিবকের কাছে সমতল ভূমিতে নেমে আসে। সিবকের কাছে এসে তিস্তা প্রশস্ত হয়ে যায়। সিবকের ভাটিতে আবার লিশ, সিশ, চেল ও নেংড়া পর্বতের স্রোতধারা তিস্তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে একে আরও সমৃদ্ধ করে। তিস্তা দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের ওপর দিয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে বইতে থাকে। জলপাইগুড়ির রায়গঞ্জ থানার পূর্ব প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জলপাইগুড়ি সদর ও ময়নাগুড়ি থানা অতিক্রম করে। জলপাইগুড়িতে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তিস্তা বাংলাদেশের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছাতনাই গ্রামের মাইল খানেক উত্তর দিয়ে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে প্রায় ১১২ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে তিস্তা কুড়িগ্রামের চিলমারীতে যমুনার সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। এর আগে ডালিয়া পয়েন্টের উজানে ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করার কারণে সব সময় তিস্তা সেচ প্রকল্পে পানির ঘাটতি দেখা দেয়।

বাংলাদেশ চিঠি দেবে ভারতকে

সর্বশেষ খবর