শিরোনাম
রবিবার, ৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

খোকনকে ভোগাবে হাতপাখা, কেউ বলছেন জাপা, কারও মতে রূপন

রাহাত খান, বরিশাল

খোকনকে ভোগাবে হাতপাখা, কেউ বলছেন জাপা, কারও মতে রূপন

বিএনপিবিহীন বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে নাগরিকদের মাঝে। কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতকে ভোগাবেন ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম (প্রতীক হাতপাখা)। কেউ আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এগিয়ে রাখছেন জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপসকে। বিএনপির ভোটারদের সহানুভূতি পেলে তাদের প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন অঘটন ঘটাতে পারেন বলছেন অনেকে।

বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে গতকাল পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ছয়জন। এর মধ্যে সর্বাধিক আলোচনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১৫ আগস্টের শহীদ কৃষক নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে এবং একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। বিএনপিবিহীন সিটি নির্বাচনে খোকন সেরনিয়াবাতের একতরফা বিজয় দেখছেন অনেকে। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিমও চমক দেখাতে পারেন বলছেন একশ্রেণির নাগরিক। আবার জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপসকে নিয়েও আশাবাদী অনেকে। শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন প্রার্থী হয়ে তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর সমর্থন পেলে ভোটের সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ পর্যন্ত মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতি সৈয়দ এছাহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, নগরীর চৌমাথা এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যবসায়ী লুৎফুল কবির এবং সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের বিএনপি ঘরানার সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন হাওলাদার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুভেচ্ছা বিনিময়কালে মানুষ প্রশ্ন করছে নির্বাচন কি ফেয়ার হবে? নাকি ২০১৮ সালের মতো নিয়ে যাবে। তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কমিশনের ভ্রুক্ষেপ নেই। জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধিদল রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ভালো না। আচরণ দেখে মনে হয় তিনি সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এসেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন। খুলনার এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা তাকে বরিশাল পাঠিয়েছেন।

তাপস আরও বলেন, প্রায় এক যুগ মাঠে আছি। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকছি। আওয়ামী লীগের বিগত প্রার্থী উন্নয়ন করতে পারেননি। তাদের মানুষ বিশ্বাস করে না। সরকারের বিরুদ্ধেও মানুষের অনেক ক্ষোভ। পরিকল্পিত শান্তির নগরী গড়তে মানুষ জাতীয় পার্টির প্রার্থী বেছে নেবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানুষ ভোট দেয় কেন, তারা একেকটা রাজনৈতিক দল পছন্দ করে কেন। মানুষ শান্তি, মুক্তি, বাকস্বাধীনতা, অধিকার ও উন্নয়ন চায়। চুরি না হোক, ডাকাতি না হোক, ইভ জিটিং না হোক, মাদক না থাকুক সেটা চায়। স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাররা ভাবতেছে আমরা একজন অভিভাবক পাব। অন্য দলের কেউ মেয়র হলে একদল আরেক দলকে লড়াবে, ঝাঁপাবে, পেটাবে। কেউ দখল করবে, কেউ বঞ্চিত হবে, কেউ হবে নির্যাতিত। সবাই মনে করে ‘হুজুর’ (প্রার্থী) নির্বাচিত হলে তিনি আমাদের সবার নিরাপত্তা প্রদান করবেন।

সরকারের নিজের প্রয়োজনেই একটা ফেয়ার নির্বাচন করা উচিত বলে মনে করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ও দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করিম। নির্বাচনের নামে প্রহসন হলে সরকার বেকায়দায় পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বরিশাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় নগরবাসী অন্যরকম অনুভূতি পাচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনে কর্মপরিধি-পরিষেবা বৃদ্ধি করব। বরিশালকে শান্তিময় তিলোত্তমা নগরী গড়ব। ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। আমি আমার বাবা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং মামা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরসূরি হতে চাই। তিনি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন আশা করেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা অন্য তিন প্রার্থীর কোনো আলোচনা নেই। বিএনপি ঘরানার সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি এখনো। প্রার্থীদের আশঙ্কা এবং প্রত্যাশার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, প্রার্থীরা যে-যার মতো বলছেন। কমিশন আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আইন ও বিধি অনুযায়ী যেসব দায়িত্ব আছে সেগুলো আমি পালন করব।

সর্বশেষ খবর