বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিনিয়োগে বড় লক্ষ্য ১৭ লাখ কোটি টাকা

আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৩৮.৪ শতাংশ অর্থায়ন লাগবে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বিনিয়োগে বড় লক্ষ্য ১৭ লাখ কোটি টাকা

আসন্ন বাজেটে সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের বড় লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য এই লক্ষ্য স্থির করেছে অর্থ বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেটে সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি অর্জনের জন্য এই বিনিয়োগ দরকার। তবে করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচনী বছরের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এত বেশি বিনিয়োগ আনা সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রগুলো জানান, আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে টাকার অঙ্কে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ; সে ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১৬ লাখ ৯২ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। মোট বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের অবদান জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ- যার পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অপরদিকে সরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ ধরা হয়েছে জিডিপির মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা করে সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি অর্জনের জন্য অর্থনীতিকে গতিশীল করার কোনো বিকল্প নেই। আর অর্থনীতিতে গতি আনতে মানুষের চাহিদা ও ভোগ বাড়াতে হবে। এ জন্য বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি ব্যয় বাড়ানো প্রয়োজন; কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগের যে লক্ষ্য তা খুব বেশি বাড়েনি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর মাধ্যমে মূলত সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে। সূত্র জানায়, সুদ ও ভর্তুকিতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আগামী বাজেটে এডিপির বরাদ্দ বেশি বাড়াতে পারেনি সরকার। চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ মাত্র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। যেখানে আগের অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, সেখানে আসন্ন বাজেটে মাত্র ১৭ হাজার কোটি টাকা ‘সরকারি বিনিয়োগ’ বাড়িয়ে নতুন এডিপি অনুমোদিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে মানুষের চাহিদা ও ভোগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সে জন্য বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি ব্যয় বাড়ানো প্রয়োজন। সামনের দিনগুলোতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে তেমন উদ্দীপনাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না; বরং আগামীতেও সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি বহাল রাখবে বলে আভাস মিলেছে। অর্থ সাশ্রয়ে ইতিমধ্যে সরকারি নানা সিদ্ধান্ত এসেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনা, নতুন ভবন নির্মাণসহ বিলাসী ও কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়গুলো কমিয়ে অর্থ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আমদানি ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে বিলাসদ্রব্য ও দেশে উৎপাদনযোগ্য পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী বাজেটে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এত বেশি প্রবৃদ্ধির দরকার ছিল না। কারণ যত বেশি প্রবৃদ্ধি তত বেশি বিনিয়োগ দরকার। করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে এত বেশি বিনিয়োগ আসবে না। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক এই নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, নতুন বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে- অর্থের প্রবাহ কমানো হবে। অপচয় কমাতে এরই মধ্যে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এটি ঠিক আছে। কারণ প্রবৃদ্ধি ৬ না ৭ শতাংশ হলো সেটি মানুষ দেখতে যাবে না; বরং বাজারে চালের দাম ৫ টাকা বাড়লে মানুষের কষ্ট হয়। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাজেটে উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর বড় বিনিয়োগ লক্ষ্য কেন নেওয়া হচ্ছে সেটি বোধগম্য নয়।

সর্বশেষ খবর