মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যাগেজ রুলে অলংকার সুবিধা কমানোর দাবি বাজুসের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে সোনার অলংকার আনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা ৫০ গ্রাম করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এ ছাড়া সোনা ও রুপার অলংকার বিক্রিতে আরোপিত ভ্যাট ৩ শতাংশসহ ১১টি প্রস্তাব আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাজুস। গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বাজুস কার্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাজুসের সহ-সভাপতি ও বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

এ সময় উপস্থত ছিলেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুসের সহ-সম্পাদক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সমিত ঘোষ অপু, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়াল প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজুস সব সময় সোনা বিক্রেতা ও ক্রেতার স্বার্থরক্ষায় কাজ করছে। তাই ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার দিকেও দৃষ্টিপাত করে বাজুস। ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে গয়না আনার ক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম থেকে কমিয়ে সর্বোচ্চ সীমা ৫০ গ্রাম করার প্রস্তাব করছি। এতে দেশের সোনাশিল্পীদের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জুয়েলারি শিল্পের দিকে ক্রেতাসাধারণ আকৃষ্ট হবেন। স্থানীয় সোনাশিল্পীদের বাঁচানোর স্বার্থে এটা সময়ের দাবি। বাংলাদেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে তৈরি গয়না স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে সমানভাবে সমাদৃত হয়ে থাকে। তাই স্থানীয় স্বর্ণশিল্পীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।’

বাজুসের সহ-সভাপতি বলেন, বর্তমানে জুয়েলারি ব্যবসার ক্ষেত্রে সোনা, সোনার অলংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক। সোনার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ক্রেতাসাধারণের ওপর বোঝা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। ফলে অধিকাংশ ক্রেতা ভ্যাট প্রদানে অনীহা প্রকাশ করেন, যার প্রভাব পড়ে রাজস্ব আয়ে। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকারের প্রয়োজন রাজস্ব আয়ের নতুন উৎস খোঁজা। জুয়েলারি শিল্প বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অনেকাংশেই সাহায্য করতে পারে, যদি এ খাতের ওপর আরোপিত ভ্যাটের হার কমানো হয়।

তিনি বলেন, চলতি বছর ২৮ মের তথ্যমতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বিনিময় মূল্যের কারণে ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম বা প্রতি এক ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের মূল্য ৯৬ হাজার ৬৯৪ টাকা। এর সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। সঙ্গে নির্ধারিত ৫ শতাংশ হারে বা ৫ হাজার ৯ টাকা ভ্যাট যুক্ত হলে মোট মূল্য হয় ১ লাখ ৫ হাজার ২০৩ টাকা। দেশে প্রতি ভরিতে ভ্যাট দিতে হয় ৫ হাজার ৯ টাকা। অন্যদিকে ভারতে সমপরিমাণ স্বর্ণের অলংকার কিনতে ৩ শতাংশ হারে বা ২ হাজার ৭৯১ টাকা ভ্যাট দিতে হয়, যার প্রভাব স্বর্ণের অলংকার ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বিদ্যমান। আনোয়ার হোসের বলেন, সারা দেশে ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো হলে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় সম্ভব হবে। ব্যবসার ক্ষেত্রেও সমতা আসবে। এ ক্ষেত্রে বাজুসের স্পষ্ট বক্তব্য হলো- ইএফডি মেশিন সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে না বসিয়ে কাউকে হয়রানি করা যাবে না। বর্তমানে অপরিশোধিত আকরিক স্বর্ণের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্ত সাপেক্ষে ১ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছে বাজুস। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করার উদ্দেশ্যে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে জুয়েলারি শিল্পে শৃঙ্খলা আসবে। এটি একটি আমদানি বিকল্প শিল্প হিসেবে পরিণত হবে। স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ হবে। আংশিক পরিশোধিত সোনার ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার ৫ শতাংশ করা হোক। তিনি বলেন, ‘হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করার উদ্দেশ্যে সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানিকৃত রাফ ডায়মন্ডের সিডি ১০ শতাংশ এবং এসডি ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। বৈধ পথে মসৃণ হীরা আমদানিতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানিকৃত মসৃণ হীরা ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার শর্তে এসডি ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। আয়কর আইনে ৪৬-(বিবি) (২) ধারার অধীনে স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদানের প্রস্তাব করা হলো। স্বর্ণের অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ককর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদানের প্রস্তাব করা হলো। বৈধভাবে স্বর্ণের বার, স্বর্ণের অলংকার, স্বর্ণের কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট মূল্য সংযোজনের ৫০ শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করছি।’

এইচএস কোডভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্কহারগুলো হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্কহার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান; মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক, অর্থ আইন, ২০১৯-এর ১০২ ধারাবলে চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদ্ধার করা স্বর্ণের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব করেন আনোয়ার হোসেন।

 

সর্বশেষ খবর