সরকারের হুমকি-ধমকি ও ভোক্তা অধিকারের টানা অভিযানের পরও কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ডিম, আলু ও পিঁয়াজ নিয়ে জনসাধারণের ভোগান্তি কমছে না। দুই দফা ডিম ও আলু আমদানির ঘোষণার পরও সুফল মেলেনি বাজারে। আগের মতোই চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে ডিম ও পিঁয়াজ। অনেক ক্ষেত্রে বাজারে সংকট রয়েছে আলুর।
মূল্য নির্ধারণের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না কোনো পণ্য। উল্টো হিমাগার মালিক ও পোলট্রি ব্যবসায়ীরা পণ্য দুটির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। প্রথম দফায় ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতির পর আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আলুর দাম না কমায় এবার সবজি জাতীয় এ পণ্যটিও আমদানির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের লাগাতার অভিযানের পরও নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, আড়ত থেকে কিনছেন বেশি দামে। লোকসানে বিক্রি সম্ভব নয়।
রায়েরবাগ বাজারে দেখা যায়, আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০ টাকা, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা করে। এ ছাড়াও ভারতীয় পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায় এবং দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে, যেখানে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। এ ছাড়াও ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫০ টাকা করে, যেখানে সরকারি নির্ধারিত দাম ৪৮ টাকা। কোনো পণ্যেরই যথাযথ দাম বাজারে পাওয়া যায়নি।
আলুর দাম প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী মো. শরীফ মাহমুদ বলেন, আলু বর্তমানে ৪০ থেকে ৪২ টাকা পাইকারি দরেই কিনে আনতে হয়েছে। ৪০ টাকার নিচে কিনতে পারাই কঠিন, তাহলে সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকা করে বিক্রি কীভাবে করব। আমরা কমে কিনতে পারলে তাহলে কমে বিক্রি করতাম। আমরা যদি কম দামে কিনতে পারি তাহলে তো বেশি দামে বিক্রি করার কোনো মানে হয় না। দাম কম থাকলে বরং বিক্রি আরও বেশি হয়। আবদুল্লাহ নামের এক বিক্রেতা বলেন, আলুর যে সিন্ডিকেট, ভোক্তা পর্যায়ে আসার আগেই দামের পাঁচটি স্তর রয়েছে। ৩০ টাকার আলু যদি এই পাঁচটি স্তরে ২ টাকা করেও লাভ করা হয়, তারপরও ১০ টাকা বেশি দামে আমাদের বিক্রি করতে হবে। আমাদের খুচরা বাজারে যে কোনো পণ্যের দাম আড়তের সঙ্গে মিলিয়ে বিক্রি করতে হয়। আড়ত যদি রাতারাতি দাম কমিয়ে দেয়, তাহলে আমরাও কমে বিক্রি করতে পারি। আবার আরও যদি রাতারাতি দাম বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। দামটা আসলে সরাসরি আড়তের সঙ্গে নির্ধারিত। শনির আখড়ার ডিম বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ডিম প্রতি ডজন বিক্রি করছি ১৫০ টাকা করে, হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। আমরা যদি কম দামে কিনে আনতে পারি, তাহলে কম দামে বিক্রি করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে খুচরা বাজারে অভিযান করার আগে পাইকারি বাজারগুলোতে কী দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটি দেখা উচিত।
সবজির বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যার মধ্যে লম্বাকৃতির বেগুন প্রতি পিস ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকায় এবং ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি পিস জালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বলতে পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কচুরমুখি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা আর কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে দেশি পিঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় আর আমদানি করা পিঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এ ছাড়া ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।