উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাম এলাকার মানুষের খাদ্যের ধরনে পরিবর্তন হয়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ মাছ-মাংসের মতো প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়েছে। বিপরীতে তারা ভাতের মতো শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। আবার কম দামের মাছ তেলাপিয়া ও পাঙাশের চাহিদা বেড়েছে। গ্রামের দরিদ্র মানুষের খাদ্যের ধরনও পাল্টেছে। তারা এখন আলু, পিঁয়াজ, সবজি, সয়াবিন তেল ও চিনি কম খাচ্ছে। তবে অপেক্ষাকৃত ধনীদের মাছ-মাংস, ফল খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। তারা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার কমিয়ে শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়েছে।
গ্রাম এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গ্রামীণ এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কীভাবে খাদ্য গ্রহণের ধরন প্রভাবিত করেছে এ নিয়ে গবেষণা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, গবেষণা ফেলো মো. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী ও গবেষণা সহযোগী রিজওয়ানা ইসলাম।
গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর-তিন মাস দেশের ৬৪ জেলার ৩ হাজার ৮৮৭ পরিবারের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য সংগ্রহ করেছে বিআইডিএস।
জরিপে মোট ১১ ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম হিসাব করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে ২০২৩ সালের একই সময়ে ১৫ শতাংশের বেশি খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০২২ সালের অক্টোবরে চালের দাম প্রতি কেজি ছিল ৫৪ দশমিক ৬৫ টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৫৭ দশমিক ৪৬ টাকা। আটার কেজি ২০২২ সালের অক্টোবরে ছিল ৫০ দশমিক ৫৩ টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৫২ দশমিক ৩৮ টাকা।
গরুর মাংস ২০২২ সালের অক্টোবরে ছিল ৬৭৬ দশমিক ৩৩ টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৭১৭ দশমিক ৯৭ টাকা। তাজা মাছের কেজি ২০২২ সালের অক্টোবরে ছিল ৩১১ দশমিক ৮৫ টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৩৬৮ দশমিক ৯২ টাকা। আলু ২০২২ সালের অক্টোবরে ছিল ৩০ দশমিক ২৭ টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৫২ দশমিক ১৩ টাকা। চিনি ২০২২ সালের অক্টোবরে ছিল ১০৭ দশমিক ৩ টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ১৩৬ দশমিক ৮ টাকা। দুধের দাম ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রতি লিটার ছিল ৫৬ দশমিক ৫১ টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৭০ দশমিক ৮১ টাকা। এক বছরে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে আলুতে। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের একই সময়ে আলুর দাম বেড়েছে ৭২ দশমিক ২২ শতাংশ।
বিআইডিএসের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২২-এর তুলনায় ২০২৩ সালে অর্থাৎ এক বছরে চালে ১-৫, গরুর মাংসে ৬, ব্রয়লার মুরগিতে ১৫, মাছে ২৭, ফার্মের মুরগির ডিমে ২৪-২৭, চিনিতে ৩৫, তরল দুধে ২৫ ও সবজিতে ৩০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষের তুলনায় উচ্চ আয়ের মানুষ রুই-কাতলা মাছ খায় বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষ গড়ে ৫ গ্রাম মাছ খায়। আর উচ্চ আয়ের মানুষ খায় ১০ গ্রাম।
বিআইডিএসের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২২ সালে গ্রামের মানুষ দৈনিক মাথাপিছু ৩৪৯ গ্রাম ভাত গ্রহণ করলেও তা পরের বছর বেড়ে ৩৯৪ গ্রাম হয়েছে। অন্যদিকে ২০২২ সালে যেখানে দৈনিক মাথাপিছু ১০ গ্রাম গরুর মাংস খেত, সেখানে গত বছর কমে ৪ গ্রামে নেমেছে। এ সময়ে মাথাপিছু দৈনিক ফল খাওয়ার পরিমাণ ৯১ গ্রাম থেকে কমে ২৬ গ্রাম হয়েছে।
গবেষক রিজওয়ানা ইসলাম বলেন, ‘উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাম এলাকার দরিদ্র মানুষ তাদের খাদ্যের ধরন পাল্টেছেন। তারা মাছ-মাংসের মতো অধিকাংশ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ কমিয়েছেন। যেমন আগে গ্রামের অনেকে রুই-কাতলার মতো মাছ খেলেও এখন তারা তেলাপিয়া ও পাঙাশের মতো কম দামের মাছ কিনছেন।’