দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলার অধিবাসীরা অপহরণ আতঙ্কে তটস্থ। পাহাড়ে চাষ করা কৃষক এবং দিনমজুরদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটছে একের পর এক। এমন অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের। অপহরণ হওয়ার ভয়ে পাহাড়ে থাকা ফলের বাগান এবং কৃষিজমিতে যেতে পারছেন না লোকজন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) রাসেল বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে সন্ত্রাসীদের দ্বারা অপহরণের বিষয়টি আমরা অবগত। এরই মধ্যে প্রত্যেক থানা পুলিশকে অপহরণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশ অপহরণের ঘটনাগুলোর ছায়াতদন্ত করছে।’
জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারি, রাঙ্গুনিয়া এবং বোয়ালখালী। এ উপজেলাগুলোর পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে লেবু, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা, কাঁঠাল, সুপারি, আম, আনারসের শত শত বাগান। এ ছাড়াও রয়েছে শত শত একরের শাকসবজির খেত। এ অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকাকে ঘিরে প্রতি বছর হয় শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য। কিন্তু প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই-সময়ে এ অঞ্চলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে সন্ত্রাসীরা। তারা প্রায় সময় অস্ত্রের মহড়া দেয়। বাগান মালিক ও দিনমজুরদের টার্গেট করে দাবি করেন চাঁদা। প্রত্যাশিত চাঁদা না দিলে করে অপহরণ। আদায় করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। গত দুই বছরে এসব সন্ত্রাসীর হাতে কয়েক শ অপহরণ এবং মুক্তিপণের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকদিন আগে চন্দনাইশের কাঞ্চননগর ইউনিয়নের বড়চর পাহাড়ি এলাকা থেকে অপহৃত হন আহম্মদ হোসেন এবং আলী মনসুর নামে দুই কৃষক। অপহরণের পর তাদের পরিবারের কাছে ৩ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করা হয়। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগরের পাহাড়ি এলাকায় পেয়ারা তুলতে গেলে একসঙ্গে ১৪ জনকে সন্ত্রাসীরা অপহরণের চেষ্টা করে। এ সময় গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে অপহৃতদের ছেড়ে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরের তিন মাসে একই এলাকায় কমপক্ষে ২০টি অপহরণ ও অপহরণ চেষ্টার ঘটনা ঘটে। ৭ জুন পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের একটি চা-বাগান থেকে পাঁচ শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। মুক্তিপণ আদায়ের পর ওইদিনই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। চন্দনাইশ উপজেলার স্থানীয়রা জানান, চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকায় প্রতি বছর শতকোটি টাকার পেয়ারা এবং লেবু চাষ হয়। দেশের বিখ্যাত কাঞ্চন পেয়ারার অধিকাংশ বাগানই এ পাহাড়ি অঞ্চলে। পেয়ারা এবং লেবু চাষের জন্য হাজারো চাষি ও শ্রমিক যান পাহাড়ে। চাষ করতে যাওয়া কৃষক এবং শ্রমিকরা প্রায়ই অপহরণের শিকার হন। সন্ত্রাসীদের উপদ্রব বৃদ্ধির ফলে চাষিরা বাগানে যেতে সাহস পাচ্ছেন না।