ওয়ার্ক পারমিট চুক্তিতে দ্বীপরাষ্ট্র ফিজির একটি সুপার শপে কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২৫ বাংলাদেশি শ্রমিকের সঙ্গে নিয়োগকারী কোম্পানি প্রতারণা করেছে। কাজ না দিয়ে উল্টো এসব শ্রমিককে একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এখন ফিজিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আবাসন, অর্থ ও খাবারের সংকটে দুর্বিষহ সময় পার করছেন তারা। বকেয়া মজুরি, নিম্নমানের জীবনযাপন, চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত এসব শ্রমিক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের দ্রুত উদ্ধার করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল এ প্রতিবেদকের কাছে পাঠানো এক ভিডিওবার্তায় তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে এ আকুতি জানান। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে পাঠানো এক ভিডিওবার্তায় তারা জানান, জনপ্রতি ৬ লাখ টাকা খরচ করে তারা ফিজিতে আসেন। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী তাদের যে কাজ দেওয়ার কথা ছিল তা নিয়োগকর্তা দেননি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে ভিডিওবার্তায় নিজেদের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কয়েকজন শ্রমিক। তারা বলেন, ‘কোম্পানি এখানে নিয়ে আসার পর আমাদের কোনো কাজ দেয়নি। আমাদের কোনো খাবার দিচ্ছে না। একটি রুমের মধ্যে ১২ জনকে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের উদ্ধার করেন। আমরা খেতে পারছি না। একবেলা খাই তো, আরেকবেলা খেতে পারি না। আমাদের উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেন ড. ইউনূস স্যার। ফিজির দোকানে কাজ দেওয়ার নাম করে এখানে এভাবে ফেলে রেখেছে। আমাদের এ জায়গা থেকে বাঁচিয়ে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’
এ শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে নিয়োগকর্তা প্রতারণা করেছেন বলে মনে করেন ফিজির প্রধানমন্ত্রী সিটিভেনি রাবুকা। তিনি ফিজি সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের এ ভোগান্তির জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়েছেন। বেসরকারি হিসেবে প্রায় ৫ হাজার বিদেশি শ্রমিক এখন ফিজিতে কাজ করেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক।
আটকে পড়া শ্রমিকদের একজন মো. আখতার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা রাফিয়া ওভারসিজের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে এখন দুঃস্বপ্নে মতো সময় কাটাচ্ছি। ফিজিতে বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকায় আমরা তেমন সহায়তা পাচ্ছি না। শ্রমিকরা আরও জানান, ২৫ জন শ্রমিকের মধ্যে ১২ জনের পাসপোর্ট এখন ফিজি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় এখন নিয়োগকারী কোম্পানির দেওয়া একটি রুমে এক প্রকার আটকে আছেন। ছয়জন এখন কোম্পানির কাজ করছেন। আর বাকি সাতজন পালিয়ে গেছেন। মূলত ফিজিতে এসব শ্রমিক মাত্র পাঁচ মাসের কাজের সুযোগ পান। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যে প্রতিষ্ঠান এসব শ্রমিক ফিজিতে পাঠান অর্থাৎ রাফিয়া ওভারসিজ এ বিষয়টি শ্রমিকদের কাছ থেকে লুুকিয়ে রাখে। এতে এসব শ্রমিক প্রতারণার শিকার হন। এ ঘটনায় ছয়জন বাংলাদেশি শ্রমিক ফিজি ইন্ডিপেনডেন্ট কমিশন এগেইনস্ট করাপশন (এফআইসিএসি) এর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তারা জানান, চুক্তি ভঙ্গ করায় তারা বাংলাদেশ থেকে কাজ করতে এসে ভয়াবহ আবাসন সংকটে ভুগছেন। এফআইসিএসি-কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ফেসবুকে তাদের অফিশিয়াল পেজে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে নিশ্চিত করে। এতে নিয়োগকর্তার মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করা এবং স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বহিষ্কারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করা হয়। অন্য যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়, তার মধ্যে রয়েছে- বকেয়া মজুরি, নিম্নমানের জীবনযাত্রার অবস্থা, অপর্যাপ্ত ভরণপোষণ, চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা। এরই মধ্যে নিম্নমানের জীবনযাত্রার পরিবেশ এবং কর্মসংস্থান চুক্তির লঙ্ঘন করার খবরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সিটিভেনি রাবুকা এই শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি একই সঙ্গে ফিজির কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও অভিবাসন মন্ত্রীকে যৌথভাবে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া নিয়োগকর্তাকে অবিলম্বে শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থা উন্নত করার এবং তাদের চাহিদা পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন। আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে আছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মো. সহিদুল ইসলাম ও মো. আমিনুল ইসলাম। মেহেরপুরের মো. আখতার হোসেন, মো. ফারুক হোসেন, মো. সাজেদুর, মো. মামুন অর রশীদ, মো. আজিজুল। সাভারের মো. রাসেল। ময়মনসিংহের মো. মাহাহিদুল ইসলাম। ঝিনাইদহের মো. আক্তার হোসেন।
এ ব্যাপারে রাফিয়া ওভারসিস-এর প্রোপাইটর মো: রাসেলের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।