হল ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে অনড় রয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। দিনভর আন্দোলনে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে।
ভেটেরিনারি অনুষদ এবং পশু পালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রায় এক মাস ধরে কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করছেন। দুই অনুষদের ডিগ্রিকে একীভূত করে একটি কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি তাদের। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিষয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি। গত রবিবার একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় দুপুরের পর থেকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে ভিসিসহ প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষককে আটকে রেখে সামনে তালা মেরে দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভিসির বাসভবনের পাশ থেকে ২৫০-৩০০ জন বহিরাগত দেশি অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে বহিরাগতরা তালা ভাঙলে অবরুদ্ধ শিক্ষকরা বেরিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিক শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। এরপর হল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বের হয়ে ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রবিবার রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রশাসনের নির্দেশ মতে সোমবার ভোর থেকে কিছু নারী শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করলেও ছেলেরা নির্দেশনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ এবং রেলপথ অবরোধ করেন। এতে অংশ নেন নারী শিক্ষার্থীরাও। সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কে আর মার্কেটের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমতলায় সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এ এইচ এম হিমেল বলেন, দুপুর ২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাহার এবং হলগুলোতে সব সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ, হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা, হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক কৃষি অনুষদের আসাদুজ্জামান সরকার, তোফাজ্জল, শরীফ, রাফি, বজলুর রহমান মোল্লা, মনির, আশিকুর রহমান, কামরুজ্জামানসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, কম্বাইন্ড ডিগ্রি অনতিবিলম্বে প্রদানের দাবি জানান তিনি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো সাড়া না আসায় বিকাল ৪টার দিকে জব্বারের মোড় রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন আটকে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। অবরোধের আড়াই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বিবেচনা রেলপথ থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকা ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন চলছে। প্রশাসনের সাড়া না পাওয়ায় রেলপথ অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি। কষ্টের বিষয় বহিরাগতের দিয়ে প্রশাসন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.এ কে এম ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে এককভাবে আমার কিছু করার নেই। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সুন্দর সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা না মেনে বিপথে হেঁটেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হল ছাড়ার নির্দেশনা না মেনে তারা আন্দোলন করছে। বিষয়টি এখনো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, জেলা প্রশাসক যা ভালো মনে করবেন তাই হবে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুফিদুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পক্ষ থেকে তাদের উদ্ধারের জন্য অনুরোধে আমরা সেখানে যাই। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে কনভেন্স করার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ করে একজন শিক্ষক অচেতন হয়ে গেলে তাকে বের করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করছিলাম। ওদিকে ব্যস্ত থাকার সময় ধর ধর বলে মিছিল নিয়ে ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়। এদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাচাইবাছাই করে দেখবে উনারা (হামলাকারীরা) কারা। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই দেখবে। সেখানে আমাদের বলার কিছু নেই।