রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্প যেন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। এখানে খুন, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি ও মাদক কারবার নৈমিত্তিক ঘটনা। অসংখ্য মামলার আসামি হয়েও দুর্দান্ত দাপটে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন দাগি মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীরা। মাঝেমধ্যে ধরা পড়লেও দুই-তিন মাসের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন সময়ে নানান অঘটন ঘটিয়ে আলোচিত হচ্ছে জেনেভা ক্যাম্প। পুলিশ, র্যাব ও যৌথ বাহিনীর একের পর এক অভিযান চলছে, গ্রেপ্তার হচ্ছেন আলোচিত অপরাধীরা; উদ্ধার হচ্ছে মাদক, টাকা, অস্ত্র। এর পরও থামছে না অপরাধ।
গতকাল ভোরেও মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ আর আধিপত্যের দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের মারামারির সময় ককটেল বিস্ফোরণে প্রাণ হারান জাহিদ নামে এক যুবক। মোহাম্মদপুর থানার ওসি কাজী মো. রফিক আহমেদ বলেন, বিকাল থেকে জাহিদ হত্যায় জড়িতদের ধরতে জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘জেনেভা ক্যাম্পের বুনিয়া সোহেল, পিচ্চি রাজা, চুয়া সেলিমসহ চিহ্নিত মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। কিন্তু তারা জামিনে বেরিয়ে ফের একই অপরাধে জড়াচ্ছেন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতই অভিযান চলছে। বারবার গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটছে। এ ক্যাম্প এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।’
গতকাল ভোরে জেনেভা ক্যাম্পের ৪ নম্বর গলিতে দুই পক্ষের মারামারির সময় ককটেল বিস্ফোরণে মো. জাহিদ (২০) নামে এক যুবক গুরুতর আহত হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের ভগ্নীপতি রবিন হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘জাহিদ কল্যাণপুর মিজান টাওয়ারে আমার দোকানে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করত। আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে ফজরের আজানের আগে জেনেভা ক্যাম্পের ভিতরে দুই পক্ষে মারামারি চলছিল। সে সময় জাহিদ বাসা থেকে বেরিয়ে সামনে গেলে একটি বোমা এসে তার মাথায় পড়ে।
এতে সে গুরুতর আহত হয়। দ্রুত স্থানীয় ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’ জাহিদ জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানেও শান্ত হচ্ছে না জেনেভা ক্যাম্প। মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই চলছে বিভিন্ন গ্রুপের দৌরাত্ম্য। স্থানীয়রা বলছেন, সবচেয়ে বেশি মাদক কারবার চলে ক্যাম্পের ৭ ও ৪ নম্বর গলিতে। এর সঙ্গে চুয়া সেলিম, শাহ আলম, তারিক, পারমনু ওরফে গাল কাটা মনু, চেম্বার রাজ, পিচ্চি রাজা, ঠোঁট গোলাবি, ফারক, ইমতিয়াজসহ বেশ কয়েকজন জড়িত। গেল ছয় মাসে জেনেভা ক্যাম্প থেকে হাজারের বেশি অপরাধী গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। পুলিশ বলছে, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর এ ক্যাম্প থেকে ২ হাজারের বেশি অপরাধী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেনেভা ক্যাম্পের অপরাধীদের লাগাম টানতে তারা বদ্ধপরিকর।