সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানের খসড়া প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কোনো সংশোধনী না থাকলে এটিই প্রতিবেদন হিসেবে গ্রহণ করবে দুদক।
সূত্র জানায়, দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর বাইরে আবদুল মান্নান খান ও তার স্ত্রী সৈয়দা হাসিনা সুলতানার অর্থ-সম্পদের কিছু রহস্যময় উৎসের সন্ধান মিলেছে। যেমন মৎস্য চাষের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার ২২৭ টাকা উপার্জন। ২০১২ সালের ২২ জুন থেকে ২৭ দিনের ইউরোপ ভ্রমণ শেষে ফেরার পর তারা ৪৫ হাজার ইউরো ‘আয়’। এর মধ্যে হাসিনা সুলতানা আয় দেখান ১৫ হাজার ৫০০ ইউরো। মান্নান খান আয় দেখিয়েছেন ৩০ হাজার ইউরো। ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ১৬ দিনের ভ্রমণ শেষে মান্নান খান দম্পতি ‘উপহার’ লব্ধ আয় দেখান ৯৫ হাজার ইউরো। এর মধ্যে মান্নান খান এককভাবে উপহার লাভ করেন ২৫ হাজার ইউরো। হাসিনা সুলতানা উপহার পান ৭০ হাজার ইউরো। এ অর্থ প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে দেয়া সংবর্ধনায় ‘উপহার’ পেয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।
দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তারা অর্থের হিসাব দেখিয়েছেন কম করে। যেমন রাজধানীর ১১৭ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউস্থ ইউনিক হাইটসে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে মান্নান দম্পতির। যেগুলোর মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। অথচ এসবের প্রকৃত মূল্য কয়েক কোটি টাকা। এছাড়াও রাজধানীর ধানমণ্ডিতে একটি ফ্ল্যাট ২ কোটি ১২ লাখ টাকা মূল্যে দেখানো হলেও তার পরিশোধমূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৮০ লাখ টাকা। অথচ ফ্ল্যাটটি মান্নান খান আরও ২ বছর আগে মালিকানা বুঝে নিয়েছেন। সব টাকা পরিশোধ না করলে ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়ার কথা নয়।
সাড়ে ৬ মাসের অনুসন্ধানে এমনি আরও রহস্যময় অর্থ-সম্পদের সন্ধান মিলেছে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে যার হিসাবের গোজামিল রয়েছে। উপ-পরিচালক মোঃ নাসির উদ্দিন মান্নান খান দম্পতির সম্পদ অনুসন্ধান করেন।
বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখার পরিচালকের দফতরে জমাকৃত অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দুদক আইনের ২৬ (২), ২৭ (১) এবং ১৯৭৪ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মান্নান দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
বুধবার জমাকৃত খসড়া প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখনও এটি আমার কাছে আসেনি। আশা করছি আজকালের মধ্যেই পেয়ে যাব।
উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামার ভিত্তিতে ২২ জানুয়ারি দুদক সরকারদলীয় ৭ ভিআইপির দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান তাদের অন্যতম। হলফনামায় তিনি ১১ কোটি ৩ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি দেখানো হয় ৪ কোটি টাকার বেশি। অথচ নবম সংসদের হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে তার সম্পদ বাড়ে ১০৭ গুণ।