পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষায় পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সংযোগ কী মাত্রায় থাকবে তা নির্ধারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকল দিক বিবেচনায় রেখেছে এবং বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সরকার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূল্যায়ন করে আসছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। বাংলাদেশ সবসময়ই সুপ্রতিবেশীসূলভ আচরণে বিশ্বাসী এবং সকল প্রতিবেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকেও একই আচরণ আশা করে।
সংসদের বাজেট অধিবেশনে রবিবার আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেনের (পটুযাখালী-৩) এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পাকিস্তান সরকার ১৯৫জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে এই মর্মে বাংলাদেশ সরকার ১৯৫জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তানের নিকট হস্তান্তর করে। কিন্তু দু:খের বিষয় পাকিস্তান সরকার আজও তাদের বিচার করেনি।
মন্ত্রী জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দেনা-পাওনা অর্থাৎ উত্তরসূরী রাষ্ট্র হিসেসে অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়, বাংলাদেশেরে পক্ষ থেকে পাকিস্তানের নিকট দীর্ঘ অমীমাংসিত ইস্যূগুলোর একটি। বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা আদায়ে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। এ লক্ষ্যে সরকার সম্ভাব্য সব কিছুই করবে।
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে পাকিস্তানের অবস্থান গণহত্যার দায় স্বীকারের সামিল
পিনু খানের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর গণত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর বিভিন্ন সময় পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঔদ্ধত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছে যা একটি দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ। পাকিস্তানের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও মন্তব্য নিঃসন্দেহে সম্পূর্ণ অসঙ্গত, পক্ষপাতদুষ্ট এবং পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও শিষ্টাচার বহির্ভূত। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তান সরকারের বিবৃতি প্রকৃতপক্ষে একাত্তরে গণহত্য্যায় সম্পৃত্ততা ও এর দায় দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়ার শামীল।
মন্ত্রী আরও বলেন, অতি সম্প্রতি একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসীর রায় কার্যকর করার পর তুরস্কের সরকার এ বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করে। এসময় ঢাকায় নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে পরামর্শের জন্য আংকারায় তলব করে। বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এসকল অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরকারে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
৫ বছরে বিদেশের কারাগার থেকে ৪৯ হাজার মুক্ত
আব্দুল মতিনের (মৌলভীবাজার-২) এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্টমন্ত্রী জানান, বিগত ৫ বছরে বিদেশি কারাগার থেকে মোট ৪৯ হাজার ৫০৩ বাংলাদেশী মুক্তি লাভ করেছে। তার মধ্যে মালয়েশিয়ার কারাগার থেকে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৭২১ জন, সৌদি আরবের কারাগার থেকে ১৭ হাজার ৩৩৫জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতা থেকে ৫ হাজার জন, সিঙ্গাপুর থেকে ২ হাজার ২৫ জন, মেক্সিকোর কারাগার থেকে ১ হাজার ৯৮২ জন, ভারতের কারাগার থেকে ৮৭৫ জন, মায়ানমার থেকে ৩৭৭ জন, পাকিস্তান থেকে ২৪১ জন, তুরস্ক থেকে ৭২৮ জন মুক্তি পায়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৯ জুন, ২০১৬/ আফরোজ