সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহল বর্তমানে দেশের সবচেয়ে আলোচিত একটি বাড়ির নাম। জঙ্গি আস্তানাকে কেন্দ্র করে পুলিশ, র্যাব, সোয়াত; পরবর্তীতে সেনা কমান্ডোদের অভিযানের কারণে বাড়িটি আলোচিত হয়ে উঠে। দেশের গণমাধ্যম তো বটেই, বিদেশের অনেক গণমাধ্যমেও আতিয়া মহল নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অভিযানের আগে যে সুদৃশ্য আতিয়া মহল ছিল, সে মহলকে এখন যেন চেনাই যায় না! পুরো পাল্টে গেছে আতিয়া মহলের চেহারা।
সরেজমিনে শিববাড়িস্থ আতিয়া মহল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরো আতিয়া মহল ক্ষতবিক্ষত। ভেঙে চুরমার পাঁচ তলা ভবনটির জানালা। স্থানে স্থানে ভাঙা দেওয়াল। ভবনটির বিভিন্ন স্থানে লাগানো গ্রিলও বেঁকে গেছে। বুলেটের তীব্র গতিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে দেয়াল। জানালার কাচও ভেঙে চুরমার। সবমিলিয়ে আতিয়া মহল এখন বিধ্বস্ত এক ধ্বংসস্তূপ।
এদিকে, আতিয়া মহল ও আশপাশে এখনও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় ভুতূড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মানুষ ভয় আর আতঙ্কে আতিয়া মহল এলাকা এড়িয়ে চলছেন। ফলে সন্ধ্যার পর সুনসান নীরবতা নেমে আসে ওই এলাকায়। শুধু দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ছাড়া আর কারো ছায়ারই দেখা মিলে না।
গত ২৩ মার্চ (শুক্রবার) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে আতিয়া মহল ঘিরে ফেলে পুলিশ। এর আগে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক অভিযানে ধরা পড়া দুই জঙ্গির কাছ থেকে সিলেটে জঙ্গি আস্তানা থাকার বিষয়ে তথ্য পায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ওই জঙ্গিদের তথ্য থেকেই আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায় সিটিটিসি।
২৪ মার্চ থেকে আতিয়া মহলকে ঘিরে বাজতে থাকে ঢামাঢোল। সকাল থেকেই সর্বত্র ছড়িয়ে যায় সিলেটে জঙ্গি আস্তানা থাকার বিষয়টি। পুলিশ, র্যাব, পিবিআই, সিটি এসবি, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে আতিয়া মহল। সেদিন বিকেলে যোগ দেয় পুলিশের স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স (সোয়াট) টিম। রাতে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল। পরদিন সকাল থেকে শুরু হয় কমান্ডোদের দুঃসাহসিক অভিযান।
আতিয়া মহলে আস্তানা গাড়া চার জঙ্গিকে নির্মূল করতে কমান্ডোদের বিপজ্জনক অভিযানে দফায় দফায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ওই এলাকা। আর এই গোলাগুলি ও বিস্ফোরণেই পাল্টে গেছে আতিয়া মনোরম মহলের চেহারা। হয়ে আছে বিধ্বস্ত।
বিডি প্রতিদিন/৩১ মার্চ ২০১৭/এনায়েত করিম