লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে অপহরণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই প্রতিবেদনে আবেদন করা হয়েছে। আগামী ৭ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম মো. খুরশীদ আলম।
এ বিষয়ে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এস আই মো. নিজামুদ্দিন ফকির সাংবাদিকদের জানান, ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতারের করা মামলার সত্যতা পাওয়া যায়নি। আসল ঘটনা ওই মামলায় আঁড়াল করা হয়েছে- এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুল হক। ওই প্রতিবেদনে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে পাল্টা একটি মামলা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির-২১১ ধারায় ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোশতাক আহম্মেদ জানান, ফৌজদারি দণ্ডবিধির-২১১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করলে অথবা কোনো অপরাধ করেছে বলে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে মামলা দায়েরকারীকে দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম দণ্ডিত করা হবে। এছাড়া ওই মিথ্যা অভিযোগের বিষয় যদি মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা সাত বছরের বেশি সাজার যোগ্য হয়, আর সেই অভিযোগ যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে মিথ্যা অভিযোগকারীর ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড হবে।
তবে মামলার বাদী ফরিদা আখতারের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বাদীকে কিছু জানানো হয়নি। ওই প্রতিবেদনের কোন জাগজপত্র আমরা এখনো পাইনি। প্রয়োজনীয় কাগাজপত্র হাতে এলে বাদীর সঙ্গে আলোচন করে সিদ্ধান্ত নেয় হবে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জুলাই সকালে রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বেরিয়ে কবি প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে। ওইদিনই তার স্ত্রী ফরিদা আখতার স্বামীকে অপহরণের অভিযোগ এনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যা পরে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এর ১৮ ঘণ্টা পর গভীর রাতে নাটকীয়ভাবে যশোরে বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে র্যাব-পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত ১০ জুলাই ঢাকার আদালতে অর্চনা রানি নামে এক নারীকে হাজির করে। নিজেকে ফরহাদ মজহারের শিষ্য বলে জবানবন্দিতে দাবি করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, সেদিন ফরহাদ মজহার তার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই বেরিয়েছিলেন এবং ১৫ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন। খুলনায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের দোকানে ফরহাদ মজহারের যাওয়ার এবং ওই এলাকায় তার একাকী ঘোরাফেরার একটি ভিডিও পরে সাংবাদিকদের সরবরাহ করে পুলিশ।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব