গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সংলাপে বসার একদিন আগে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংলাপে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা সব সময় মনে করি জনগণ ক্ষমতার মালিক। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করবে দেশের স্বার্থ নিয়ে, দলীয় স্বার্থ না। আমরা চাই, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে সংলাপ হোক। জাতীয় লক্ষ্যগুলোকে সামনে রেখে, সংবিধানের মূল্যবোধকে সামনে রেখে সেই আলাপ অবশ্যই হোক- এটা আমরা সব সময় সমর্থন করেছি। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সেটা হবে, সেটাও আমরা পুরোপুরি সমর্থন করি। তাই দলীয় নয়, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে আগামীকাল সংলাপ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সহ সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সহ সভাপতি এম এ গোফরান প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কার্যক্রম শুরু করা হয়।
ড. কামাল আরো বলেন, ঐক্যবদ্ধ জনতার জয় হবেই, হবে। আসুন এই ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ সংলাপের মধ্য দিয়ে ঐক্যমতে এসে দেশকে আমরা এগিয়ে যাব। আগামী সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলে ধরে ড. কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। সেটাকে সুসংহত করে শক্তিতে পরিণত করে যেভাবে একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, যেভাবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমরা ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলাম একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। তারপরেও দেখা যায় যে সেই ফসল ধরে রাখতে পারি না। এবার অনুরোধ করবো, আবেদন করবো, সবাই সংগঠিত হোন, ঘরে ঘরে, পাড়া-মহল্লায় গ্রামে গ্রামে। এবারে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কিন্তু নির্বাচনের যে ফসল সেটা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। সেটা যেন কেউ এবার আত্মসাৎ করতে না পারে। আসুন দেশের মালিক হিসেবে আমাদের স্বার্থ ও সম্পদকে রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আশা করবো প্রধানমন্ত্রী সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য, মানুষের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনবার জন্য, সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আগামীকালের জাতীয় সংলাপের মধ্য দিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার তিনি করবেন। আমরা ৭ দফা দাবি দিয়েছি, তা অবশ্যই পূরণ করবেন। এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কোনো সমাধান হবে না। সরকারের দমনীতির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রতিদিন আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী যে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তা কতটা আন্তরিকতার সাথে আহ্বান করেছেন এবং সেই সংলাপের পরিণতির দ্বার কোন দিকে নিয়ে যাবে সে সম্পর্কে জনগণের মধ্যে ইতিমধ্যেই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, সরকারকে বলব, আমরা প্রত্যাশা করি সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাপ্তি আসবে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, দেশে যদি শান্তি চান, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে চান, তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা নিয়ে আলোচনা করুন। তিনি আরো বলেন, এই সংলাপ সফল করতে হবে, জনগণকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, সরকারকে সাত দফা মেনে নিয়ে জাতীয় ঐক্যমতের সরকার করতে হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেজন্যই আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। এজন্য দেশের মানুষ আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
আলোচনা সভায় সামাজিক শক্তি, গণ-সাংস্কৃতিক দল, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল, ভুমিবল সমাজবাদী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, কংগ্রেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় বিপ্লবী পার্টি, সমাতান্ত্রিক মজলুর পার্টি, সোস্যালিস্ট পার্টি, সততা পার্টি, শ্রমিক পার্টি, ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী সিপিবিএম) মোট ১৯টি দল-সংগঠন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বলে জানান জেএসডি নেতা অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর হীরু।
বিডি-প্রতিদিন/৩১ অক্টোবর, ২০১৮/মাহবুব