ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, যারা বেহেশতে যাওয়ার সহজ রাস্তা খুঁজে, জীবন থেকে পালাতে চায়, জীবনে তারাই পরাজিত, কাপুরুষ। যারা মননশীলতার চর্চা করে, লালন, নজরুল ও রবীন্দ্র শুনবে তারা উগ্রবাদে জড়াতে পারে না।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ’র সিআইসিসি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী যুব সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সিটিটিসি ইউনিট আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্মের গণমাধ্যম কর্মীরা জঙ্গিবাদের কারণ এবং উত্তরণের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে তাদের মতামত দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি রবার্ট স্টোরম্যান বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়ে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদের চালিকা শক্তি কারা তা চিহ্নিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একদল বিপথগামী তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে। ধর্মের সঠিক শিক্ষার অভাব, দুর্বল পারিবারিক বন্ধন, বিভিন্ন কারণে হতাশ তরুণদের সহজেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা যায়। তাছাড়া ইন্টারনেটে বিভিন্ন গুজব এবং উগ্রবাদী কন্টেন্ট ছড়িয়ে তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে জঙ্গিরা। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক তরুণ জানে না। এ কারণে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সহজেই তাদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা যায়। অনেক তরুণ আবার অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় জঙ্গিবাদে জড়ায়। সামাজিক ন্যায় বিচার না পেয়ে অনেক তরুণ বিপদগামী হচ্ছে বলেও তরুন প্রজন্মের অনেকেই তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
লালবাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শামসুদ্দিন তার মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, সবার মধ্যেই ধর্মীয় বিষয়ে দুর্বলতা কাজ করে। জঙ্গিরা এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী বাকী বিল্লাহ বলেন, ধর্মীয় বিষয়ে পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পেলে কেউ জঙ্গিবাদে জড়াবে না। শুধু পরিবার নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী কাসিনা সুলতানা চামেলি বলেন, জঙ্গিরা তাদের মতবাদ প্রচারে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সেখানে নানা ধরণের গুজব ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. ইরফান বলেন, শিশুদের বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। খেলাধুলার জন্য কোনো মাঠ নেই। তারা এখন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মধ্যে ডুবে থাকছে। এসব কারণে অনেক শিশু ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের সহজেই জঙ্গিরা উদ্বুদ্ধ করছে।
সাংবাদিক রাশেদ নিজাম বলেন, জঙ্গিবাদ নিরসনে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন এবং ডি-র্যাডিকেলাইজেশন সেন্টার স্থাপন করা সময়ের দাবি। গবেষণা কেন্দ্রের সুপারিশকে আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
তরুণদের বক্তব্যের বিষয়গুলোর সারাংশ তুলে ধরে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, সবগুলো সমস্যার সমাধান পুলিশের দ্বারা সম্ভব নয়। সমস্যাগুলো বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কারণ দেশটি সবার। আমাদের সামর্থ্যে যতটুকু সম্ভব ঠিক ততটুকুই আমরা করে যাচ্ছি।
তরুণদের বক্তব্য শোনার পর তাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শবনম আজীম, নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা রহমান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক নবনীতা চৌধুরী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম