জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, নূন্যতম আইনের শাসন নিশ্চিত করা না গেলে নাগরিকদের নিরাপত্তা থাকে না। যেভাবে প্রতিদিন বন্দুকযুদ্ধ চলছে, সেখানে আদালতের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাচ্ছে। এখানে জবাবদিহি একদম নেই। কারণ আইনের শাসন একদম প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। সড়কের নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি ও কায়েমী স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আইনের শাসন সুনিশ্চিত করতে হবে। দেশে আইনের শাসন অনুপস্থিত বলেই পদে পদে ভোগান্তি হচ্ছে।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আজ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে “ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ: আমাদের দায়িত্ব” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী লিখিত বক্তব্যপাঠ করেন।
আরো বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, ডিটিসিএ’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস.এম সালেহ উদ্দিন, ঢাকা যানবাহন সমন্ময় কর্তৃপক্ষ’র সিনিয়র আর্বান প্লানার তপন কুমার নাথ, বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্ময়কারী জোনায়েদ সাকি, যাত্রী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা নুর উদ্দিন খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রামের অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ মোক্তার উদ্দিন প্রমুখ।
সভায় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, যানজটের কারণে যাত্রীবাহী বাসগুলো কাঙ্খিত সংখ্যক ট্রিপ দিতে না পেরে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রতিবছর ঈদযাত্রা মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়। গত বছর ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক পথে ২৭৭ টি দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ১২৬৫ জন আহত হয়েছিল। অধিকাংশের মৃত্যুর কারণ পণ্যবাহী যানবাহনের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষ ও বেপরোয়া গতি। তাই এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালক বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্ময়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সড়কের সমস্যাকে ঈদের আগে ঈদের সমস্যা হিসেবে না দেখে বছরব্যাপী এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ থাকা জরুরি। তিনি পরিবহনে চাঁদাবাজি জিইয়ে রাখা, শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, কর্মঘন্টা ও মজুরি না থাকায় পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।
সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, দেশে সড়কের পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভাল। এবার সড়কের কারণে ভোগান্তি হবে না। তবে গণপরিবহন সংকটসহ নানা কারণে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করা সম্ভব হয় না।
বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করা না গেলে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা কোন ভাবেই কমানো যাবে না। তিনি এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
বিআরটিএ’র রোড সেইফটি পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, প্রতি ঈদে অল্প সময়ে এত বেশি সংখ্যক লোকজনের যাতায়াত সামাল দেওয়া সত্যিই দূরহ।
ডিটিসিএ’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস.এম সালেহ উদ্দিন বলেন, পরিকল্পিতভাবে যানবাহন নিবন্ধন করা না গেলে দেশের সড়ক মহাসড়কের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফল ধরে রাখা যাবে না। তিনি ঈদ ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের উপর জোর দেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার