একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন চলবে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সংসদ ভবনে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রতিদিন বিকেল ৫টায় অধিবেশন শুরু হবে। তবে স্পিকার চাইলে অধিবেশনের সময় বাড়াতে বা কমাতে পারেন।
বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে নাটকীয়তা:
এদিকে সংসদ ভবনে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে চলেছে নানা নাটকীয়তা। জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের যে বৈঠক হবার কথা ছিল তা কার্যত অনুষ্ঠিত হয়নি। দুপুর ১২ টা সাড়ে ১২টা থেকে অনেক এমপি তার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। বিকেল ৩-৪৫ মিনিট নাগাদ রওশন এরশাদ সংসদ লবিতে এসে দলীয় এমপিদের সঙ্গে কিছু কথা বলে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে যোগ দেন। এসময় দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে লবিতে বসে থাকতে দেখা যায়। তার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ গণমাধ্যমের জানান, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হচ্ছেন বেগম রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সন্ধ্যে ৬টা ১৫ মিনিট নাগাদ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জাপার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। এর আগে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে রওশন এরশাদ বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে যোগ দেন। এসময় তার সঙ্গে দলের এমপি মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ এবং আবু হোসেন বাবলা উপস্থিত ছিলেন।
অধিবেশনে বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারে রওশন
বিকেলে ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার। পরে চলতি একদশ সংসদের এমপি, বিরোধী দলীয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দর্শক গ্যালারিতে বসে দেখা যায় সংসদে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসেছেন রওশন এরশাদ। তারপাশেই বসেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, আনিসুল ইসলামমাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ। সংসদে জাতীয় পার্টির সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তবে বিরোধী দলীয়নেতা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার অংশ নিতে তার নাম ঘোষণার সময় বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে তার নাম ঘোষণা না করে সংসদীয় এলাকার নাম উল্লেখ করেন।
শোক প্রস্তাব গৃহীত
চলতি একদশ সংসদের এমপি, বিরোধী দলীয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয়নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, মোহাম্মদ নাসিম, শাজাহান খান, জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম, মুজিবুল হক চুন্নু, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার, বিএনপির হারুনুর রশিদ প্রমুখ।
এছাড়া সংসদে যাদের নামে শোক প্রস্তাব আনা হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সাবেক গণ পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব নগরের উপদেষ্টা, সাবেক এমএলএ ও সাবেক এমপি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, সাবেক এমএলএ অধ্যক্ষ খালেদা হাবিব, সাবেক এমপি আনোয়ারা বেগমের জীবন বৃত্তান্তসহ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার। এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, বারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি, আওয়ামী রীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য আ ন ম ফজলুল হক, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সুফি সাধক শেখ আবদুল হানিফ, কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগটক নূরুল ইসলাম, গান্ধী আশ্রমের ট্রাস্টি ঝর্ণাধারা চৌধুরী, ভাষা সংগ্রামী খালেকুল আজাদ, জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক আনোয়ার কবীর শামীমের মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক প্রকশ করে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীসহ যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত, সুদানে বন্যায় এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রস্তব গ্রহণ করে। পরে সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালনসহ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এরআগে বিকাল চারটায় অনুষ্ঠিত সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অংশ নেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় উপ নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, জাসদের হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবং বিএনপির আবদুস সাত্তার ভুঞা প্রমুখ। সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বৈঠকের কার্যপত্র উপস্থাপন করেন।
বৈঠকে জানানো হয় একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে সংসদে উত্থাপণের জন্য ৩টি সরকারি বিলের নোটিশ পাওয়া গেছে। এছাড়া আগের উত্থাপিত অনিষ্পন্ন ২টি সরকারি বিল পাশের জন্য কমিটিতে পরীক্ষাধীন রয়েছে। বেসরকারি সদস্যদের নিকট হতেও ১টি বিলের নোটিশ পাওয়া গেছে। আগের অনিষ্পন্ন ১টি বেসরকারি বিল সংসদের বিবেচনায় রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল