১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০২:৩৫

গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ড: নিহতদের মধ্যে পরিচয় মিলল ৫ শ্রমিকের

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ড: নিহতদের মধ্যে পরিচয় মিলল ৫ শ্রমিকের

গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা এলাকায় একটি ফ্যান কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০ শ্রমিকের মধ্যে পরিচয় মিলেছে ৫ শ্রমিকের। 

নিহতদের মধ্যে ৫ শ্রমিক হলেন, রংপুরের মো. ফরিদুল ইসলাম (১৮), গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মারতা এলাকার রাশেদ (২৫), মো. শামীম (২৬), কেশরিতা এলাকার খলিল (২২) ও উত্তম (২৫)। 

এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডে আহতরা হলেন, কেশরিতা এলাকার আনোয়ার হোসেন ও সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের জামুনা গ্রামের মো. হাসান মিয়া। তাদের গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, রবিবার সন্ধ্যা ৫টা ৫১ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। চারটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তারা পুরোপুরি আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এসময় দ্বিতীয় তলার উপর নির্মিত টিনসেডের ঘরের অভ্যন্তরে ১০ শ্রমিকের লাশ দেখতে পান তারা। 

তিনি আরও জানান, প্রথমে দু’তলার ছাদে তৈরি করা টিন সেডের ঘরের দরজার কাছে আগুনের সূত্রপাত হলে শ্রমিকরা আত্মরক্ষায় ভেতরের দিকে চলে যায়। পরে মুহূর্তে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে শ্রমিকরা আটকা পড়েন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর টিনসেড কক্ষ থেকে ১০ শ্রমিককের লাশ উদ্ধার করা হয়। আগুন লাগার সঠিক কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার দু’তলার ছাদে তৈরি করা টিনসেডে ১৯ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। 

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষন দাস জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দ্বগ্ধ স্থানীয় কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (২০) ও জামুনা এলাকার আব্দুল মোতালেববের ছেলে মো. হাসান (১৯) হাসপাতালে ভর্তি আছেন। 

নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্বজনরা মরদেহ শনাক্তের জন্য হাসপাতালে ভিড় করছেন। মরদেহের মুখমণ্ডল ও দেহ আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মরদেহগুলো শনাক্ত করতে স্বজনদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, ২০১৬ সালে কারখানাটি একটি ফ্ল্যাট বাসার মধ্যে ওই এলাকায় গড়ে উঠে। দু’তলা ভবনের ছাদে একটি টিনসেড রয়েছে। ওই সেডে কারখানার আর্মেচার সেকশন। সন্ধ্যায় ওই সেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
 
ওই সেকশনের শ্রমিক ফয়সাল জানান, পুরো কারখানায় ৮০ জনের মতো শ্রমিক ছিল। আগুন লাগার সময় ওই সেকশনে ১৯ জন শ্রমিক কাজ করছিল।

এ বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার জানান, কারখানাটি অব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। কারখানাটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি থাকায় শ্রমিকরা বের হতে পারেনি। তারা আগুন থেকে বাঁচার জন্য টিনসেড ঘরের এক কোনায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা ধোঁয়ায় শ্বাসরোধে ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। অবশ্যই মালিকপক্ষকে আইনের আওতায় আনা হবে।

ঘটনার পর পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম ও জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, র‌্যাব-১ গাজীপুর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট রীনা পারভীন, গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাকি, বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান শুক্কুর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, ঘটনা তদন্তে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহিনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় দেয়া হয়েছে ৭ কার্যদিবস। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের লাশ দাফন ও পরিবহনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা প্রদানের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর