দেশের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় করোনা রোগীর চিকিৎসায় নির্ধারিত সময়ের অন্তত পাঁচদিন আগেই ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ সম্পন্ন করতে চায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে রোগীর শয্যা।
সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আজই আসছে সাব স্টেশন। ১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে ততদিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার নির্মাণাধীন হাসপাতাল চত্বরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, বসুন্ধরার কনভেনশন সেন্টারে দুই হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞ যে তারা এখানে দিনরাত কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। ট্রেড সেন্টারে পাঁচ দিনেই হাসপাতালের কাজ ৬০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। ২০-২২ এপ্রিলের মধ্যে আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে চাচ্ছি। এজন্য রাতদিন সমানতালে কাজ চলছে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আজই সাবস্টেশন চলে আসবে। জেনারেটর আসবে দুই দিনের মধ্যে। আজই পাঁচশ বেড কনভেনশন সেন্টারে ঢুকে যাবে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বুঝিয়ে দেয়ার দু'এক দিনের মধ্যেই চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’ এই স্লোগান সামনে রেখে পথচলা বসুন্ধরা গ্রুপ করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগকালেও দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে এসেছে। দেশে করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারকে বসুন্ধরার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার একটি অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
সেই সঙ্গে জানানো হয়, করোনা বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত অথবা যতদিন সরকারের ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে ততদিন আইসিসিবিকে ব্যবহার করতে পারবে। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির ভিত্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সেনাবাহিনীর একটি দল পরির্দশন করে পরবর্তী সময়ে এটাকে অস্থায়ী হাসপাতাল বা আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।
প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা লকডাউন, দোকানপাট বন্ধ। এই সময়ে মালপত্র আনাও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই হাসপাতাল নির্মাণ শেষ করতে। আমাদের প্রচেষ্টায় একটি জীবন রক্ষা করা গেলেও সেটা আমাদের স্বার্থকতা। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সার্বক্ষণিক কাজের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
এ সময় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও আইসিসিবি'র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আইসিসিবি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, দেড় লাখ স্কয়ার ফুটের দেশের সবচেয়ে বড় ট্রেড সেন্টারটি হাসপাতালে রূপ দিতে সব ধরনের উপকরণ ও সরঞ্জাম চলে এসেছে। এখন শুধু স্থাপনের কাজ চলছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর যেভাবে কাজ করছে তাতে ২০-২১ তারিখের মধ্যে বেডগুলো সংযুক্ত করা সম্পন্ন হয়ে যাবে। আশা করছি ২৪-২৫ তারিখের দিকে সেবা কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া সবচেয়ে বড় কনভেশন হলটিতে (হল-৪) যে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) হচ্ছে সেখানে আজ থেকে বেড বসানোর জন্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আইসিইউ ইউনিটের জন্য যেসব কারিগরি সমস্যা ছিল, বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বুধবার তা সমাধান করে দেয়া হয়েছে। তুরস্ক থেকে একটা ওয়াসপ্লান্ট (রোগীর কাপড়-চোপড় জীবানুমুক্তকরণ যন্ত্র) আনা হচ্ছে, দুই হাজার স্কয়ার ফুট জায়গায় এটা বসানো হবে। যতদূর জানি, বিদেশ থেকে আমদানি করা সরঞ্জামগুলো এখন দেশের পথে।
তিনি বলেন, কনভেশন সিটি বসুন্ধরার একটি শতভাগ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে কোম্পানির অনেক বড় আয় হতো। সেটা বন্ধ করে চলমান করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য সরকারকে দেয়া হয়েছে। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বসুন্ধরা গ্রুপ যে অনন্য সাধারণ উদ্যোগ নিয়েছে, নিঃসন্দেহে সেটা সেবার দৃষ্টান্ত।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে দুই হাজার শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আইসিসিবি'র সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত